পারিজাত মোল্লা: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর এজলাসে উঠে কসবার স্কুলের ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর মামলাটি।
এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে তদন্তে নজরদারি করার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিত্সকদের দিয়ে তৈরি মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে পেশ করতে হবে বলেও এদিন নির্দেশ দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ।
কসবার স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ কমিশনারের নজরদারিতে তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত সোমবার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতেই এদিন কড়া নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে যে, -‘গোটা ঘটনার তদন্তে নজরদারি করবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার’।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৬ অক্টোবর। তার আগে আরও বেশ কিছু নির্দেশ মানতে হবে কলকাতা পুলিশকে।নিহত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, -‘ পুলিশকে বারবার বলা সত্ত্বেও ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করছে না।
এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টও দেওয়া হচ্ছে না’। নিহতের পরিবার জানিয়েছে, -‘শেষবার তাঁদের ছেলেকে যে ঘরে দেখা গিয়েছিল, তার কোনও ফুটেজ দেখানো হচ্ছে না। সেই ফুটেজ আদতে আছে কিনা? তা নিয়েও দেখা যাচ্ছে প্রশ্ন।
এক্ষেত্রেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, -‘ সিসিটিভি ফুটেজ এবং হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করতে হবে স্কুল থেকে। আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেশ করতে হবে মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে। বোর্ডের সদস্যরা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মতামত জানাবে’। এই মামলার আগামী শুনানিতে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট দেখবে কলকাতা হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর স্কুলের পাঁচতলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের।
স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছে, -‘সে আত্মহত্যা করেছে’। কিন্তু ছাত্রের বাবার দাবি, -‘ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তাদের ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে’। তাঁর অনুমান স্কুলের মধ্যে তার ছেলে মেরে পরে পাঁচতলা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে! তবে এই নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখন তারা ঠিক মতো কাজ করছে না বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে মৃত ছাত্রের পরিবার। কসবার সিলভার পয়েন্ট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ।
স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ ও হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করার করতে বলল আদালত। সেইসঙ্গে ছাত্রের প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসএসকেএমের চিকিত্সকদের দিয়ে তৈরি মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে পেশ করতে হবে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর কসবা রথতলা এলাকার ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ৫ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল শেখ শান নামে ওই পড়ুয়ার। সেই ঘটনায় শুরু থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করছিলেন মৃত ছাত্রের বাবা।
মানসিক নির্যাতন করেই তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। সেই ঘটনার স্কুলের প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল এবং আরও দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছিলেন তিনি।এই ঘটনায় স্কুল ছাড়াও পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছে মৃত ছাত্রের পরিবার। তাদের দাবি, পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিচ্ছে না।
সেইসঙ্গে ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করছে পুলিশ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন নিহত ছাত্রের পরিবার।মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে । সেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি!
এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি বলেন, -‘ অবিলম্বে পরিবারের হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তুলে দিতে হবে’। সেইসঙ্গে এসএসকেএমের চিকিত্সকদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার নির্দেশও দেন তিনি।
বিচারপতি বলেন, -‘ওই বোর্ডের কাছেই মৃত ছাত্রের প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তাঁরাই সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন’।বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানান , -‘ এই মামলার তদন্তের কেস ডায়েরি রিপোর্ট আগামী শুনানিতে জমা দিতে হবে পুলিশকে’।