আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হকঃ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুর এলাকার জনপ্রিয় ও জনদরদী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ডা. আবুল কালাম আজাদ বুধবার রাত দশটা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহে ….)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল প্রায় সত্তর বছর। জনপ্রিয় ওই চিকিৎসকের আকস্মিক মৃত্যুতে চিকিৎসক মহলসহ সমগ্র এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বল্পমূল্যে গরিব মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে তিনি যে আশা-ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিলেন অগণিত মানুষের কাছে– হঠাৎ সেই জায়গা হারিয়ে যাওয়ায় শোকস্তব্ধ এলাকার মানুষ। বহু গুণমুগ্ধ মানুষ হাজির হন তাঁর জানাযার নামাযে। বৃহস্পতিবার বাদ আসর তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। ডা. আজাদকে দাফন করা হয় বারুইপুর শাজাহান রোডস্থিত গোরস্থানে।
উল্লেখ্য– চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ চিকিৎসক মহলসহ রোগীদের কাছে ডা. আজাদ নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বারুইপুর গ্লোব নার্সিংহোম অ্যান্ড সোসাইটিকে আজাদের নার্সিংহোম নামেই জানতেন সকলে। ডা. আজাদ প্রায় ৪০ বছর বারুইপুরে বসবাস করলেও আদতে তিনি বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট খানার সিনুট গ্রামের ভূমিপুত্র। কৃষক পরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন ডা. আজাদ। গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছিলেন বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল থেকে। মেধাবান আজাদ কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ১৯৮১ সালে। বাঙালি মুসলমান সমাজে যখন হাতেগোনা চিকিৎসক– তখন ডাক্তারি পাস করে তৎকালীন সময়ে পশ্চাৎপদ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বারুইপুরে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন তিনি। স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় বিনামূল্যেও তিনি গরিব মানুষের চিকিৎসা করেছেন। ধর্মপ্রিয় দ্বীনদার মানুষ হিসেবেও তিনি অনেকের প্রিয় মানুষ ছিলেন। হজ করার পাশাপাশি উমরাহও করেছিলেন কয়েকবার। তবলীগ জামাতের সহযোগী হিসেবে তিনি ব্যস্ততার মাঝেও দ্বীনের প্রচারে বহু সময় ব্যয় করেছেন। দান– যাকাত প্রদানে নিয়মনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর উদার সহযোগিতা পেয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ডা. আজাদের এক পুত্র– এক কন্যা। পুত্র তৌফিক কামাল আজাদ চিকিৎসক। জামাতা ড. আশরাফ হোসেন এনআইটি– শিলচরের অধ্যাপক।
ডাক্তার আজাদ মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন সে বিষয়ে গিয়ে প্রতিবেশী ও আল আমীন মাইনোরিটি মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ড. নুরুল হক জানান– ‘ডাক্তার ছিলেন সদাহাস্য মানুষ– পরোপকারীও ছিলেন।’ আইনজীবী হাফিজুর রহমান বলেন– ‘তিনি আজীবন আর্ত মানুষের সেবা করে গেছেন’। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ সরদার বলেন– ‘ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধার ব্যক্তি ছিলেন।’ লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মহীউদ্দীন সরকার জানান– ‘ডাক্তার আজাদ ছিলেন একজন সজ্জন ধর্মভীরু মানুষ। তাঁর ব্যবহার ও আচরণে ছিল শালীনতা।’
ডা. আজাদের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে প্রাক্তন সাংসদ– পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান গভীর শোকপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন– ‘কলম যখন সাপ্তাহিক ছিল– তখন থেকেই তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। তিনি একজন সমাজদরদী চিকিৎসক বা ধর্মপ্রাণ মানুষই ছিলেন না– তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষও। তাঁর প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পুত্র-কন্যা পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ্-র কাছে তাঁর মাগফেরাত কামনা করি।’