সুবিদ আবদুল্লাহ্ঃ ভূমি দফতরে অনেকবার আবেদন করেও ভূমির দলিল পাচ্ছেন না সাবেক ছিটমহল বাসিন্দারা। অভিযোগ, কোচবিহার জেলার ভূমি ও রাজস্ব দফতর আবেদন পেয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে না। দলিল না-থাকায় হস্তান্তর করাও যাচ্ছে না। অভিযোগ ছিটমহলবাসীদের।
ছিটমহলের আট বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হয়ে গেছে গত ৩১ জুলাই। অনুষ্ঠানে এবারও দাবি ওঠে ছিটবাসীদের ভূমির অধিকার নিয়ে। বাসিন্দাদের দাবি, আমরা এখন ভারতীয়। ভারতভুক্তির আট বছর পরেও মাটির পূর্ণ মর্যাদা পাচ্ছি না আমরা। ফলে, সাবেক ছিটমহলের মানুষ ফিরে পায়নি তাদের সামাজিক আত্মমর্যাদা ও সম্মান।
জানা গেছে, ভারতভুক্তির পর ছিটমহলবাসীদের কাছে থাকা বাংলাদেশি দলিল বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয় ভূমি ও রাজস্ব দফতরের অফিসাররা ছিটমহলে এসে সার্ভে করে যান। কিন্তু সঠিক মাপজোকের পরিবর্তে সেখানে মৌখিক সার্ভে হয়। যিনি যতটা মাটির দখলে আছেন সেভাবে দাগ খতিয়ান নং দেওয়া হয়। কাগজ হাতে পাবার পরে দেখা যায় যিনি দখল করছেন যতটা মাটি ততটা দখলের দাগ খতিয়ান নেই। উলটোটাও হয়েছে। দাগ খতিয়ানে যতটা অংশের কথা বলা আছে ততটা ভূমি তার নেই।
সাবেক নলগ্রাম ছিটমহলের বাসিন্দা আজিজার মিয়াঁ জানান, বাংলাদেশি নাগরিক থাকাকালীন সময় থেকে সাত বিঘা জমি চাষ করছি বংশ পরম্পরায়। কিন্তু যে দাগ, খতিয়ানের কাগজ এখন হাতে পেয়েছি তাতে আমার জমি মাত্র দশ কাঠা। অথচ সাবেক সরকারে তাদের জমির দলিল ছিল। সেটা তো বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া কাগজ। ভারতে সেই দলিল বাতিল। এখানে যে দলিল পাব তাতে তো মাত্র দশ কাঠার উল্লেখ থাকবে। বাকি জমির কী হবে? জবাব চাইলেন তিনি। আজিজার আরও জানান, সংশোধনের জন্য ভূমি রাজস্ব দফতরে বার বার জানিয়েও কাজ হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, তাদের হাতে যে খতিয়ান আছে তার সংশোধন হোক এবং দলিল দেওয়া হোক। এক টুকরো খতিয়ানের কাগজ মূল্যহীন। ছিটমহলবাসীর দাবি, সামাজিক সম্মান নাগরিকত্ব প্রমাণে ভূমির দলিল জরুরি।
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের তিন জেলা জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে রয়েছে মোট ৫১টি ছিটমহল। যেখানে ৭৯ শতাংশ মুসলিমের বাস। বাকিরা রাজবংশী সম্প্রদায়ের হিন্দু। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ভারত বিনিময় চুক্তিতে বাংলাদেশি ছিট ভারতে ও ভারতীয় ছিট বাংলাদেশে চলে যায়।
আট বছর পেরিয়ে গেলেও ভূমির দলিল পায়নি। দাবি, দলিল না থাকায় জমি হস্তান্তর হচ্ছে না।
কোচবিহারের মাথাভাঙা-১নং অংশের ছিটবাসী মিঠু বর্মন, ভোলা বর্মনের দাবি, তাঁদের কাছে জমির দলিল না থাকায় কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারের পিএম কিষান, কৃষক বন্ধু, ভাতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে মাথাভাঙা ১নং পঞ্চায়েত সমিতির নয়া সভাপতি রাজিবুল হাসান সাগরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আট বছর ধরে প্রতিটি নির্বাচনে ছিটবাসীরা ভোট দিয়েছেন। ভারতীয় হিসেবে নাগরিক পরিষেবা পাওয়া তাঁর অধিকার। সভাপতি হিসেবে তিনি চেয়ারে নতুন। ছিটমহলের সমস্যা বিষয়টি ভূমি রাজস্ব দফতরে কী অবস্থায় রয়েছে, খোঁজ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব। অপর দিকে মাথাভাঙা-১ ব্লকের বিডিও সম্বল ঝা জানান, ছিটবাসীদের সমস্যার কথা জেনেছি। ওরাই বলেছে। ওদের বলেছি, কোন দফতরে গেলে দলিল বিষয়টির সমাধান হবে। প্রশাসক হিসেবে বলছি না। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি, বিষয়টির সমাধান হোক।
কোচবিহার জেলার পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাধিপতি আইনজীবী আবদুল জলিলকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সমস্যাটি নিয়ে উচ্চতর প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন।
ছিট বাসিন্দারা জানান, দফতরে ঘুরে ঘুরে তাঁরা হয়রান। তাঁরা বলেন, বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, ছিটমহল বিনিময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ ছিল অতি আন্তরিক ও মানবিক। মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতায় তাঁরা আপ্লুত। গত আট বছরে ছিটমহলের উন্নতিও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দলিল সমস্যা থেকেই গেছে। সেটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন ছিটমহলবাসীরা।