পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত উঠল চরমে। শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে সরাসরি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপাচার্যের নাম উল্লেখ না-করেই মমতা জানান, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যপালের নির্দেশ মেনে চললে আর্থিক অবরোধ তৈরি করবে রাজ্য সরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এইভাবে আঘাত করলে আমি রাজভবনের সামনে ধরণা দেব।
মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ধন ধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন রাজ্যপাল। আমরা এই চক্রান্ত মানব না। উনি কী ভাবছেন? মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও বড়? উনি বড় হতেই পারেন। আমিও বলে দিচ্ছি, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ওঁর নির্দেশ মেনে চললে আর্থিক বাধা তৈরি করব। দেখি, উনি কিভাবে বেতন দেয়? রাজ্যপালের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘মনে রাখবেন, আপনি যে রাজভবনে বসে রয়েছেন, তার টাকাটাও আমরা দিই! ফ্যানের খরচ, প্লেনের ভাড়া সব জনগণের। আপনি দরকার হলে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে পড়াশোনা করুন। আগে ছাত্র হোন, পড়াশোনা করুন। তার পরে বাংলা নিয়ে কথা বলবেন।’
অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘মধ্যরাতে হঠাৎ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদলে গেল। ১৬ জনকে টপকে। হঠাৎ শুনলাম কেরলের একজন আইপিএসকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চান্সেলর করে দিয়েছে। ১০ বছর প্রফেসারি করলে তবে সে প্রিন্সিপাল বা ভাইস চান্সেলর হতে পারে। রবীন্দ্র ভারতীতে করে দিয়েছে একটা এক্স জাজ’কে। ওকে আমি চিনি, কারণ ও আমার সাথে এমএ পড়েছে। সে তো প্রফেসারি করেনি। সে লিগাল কাজ করেছে। পুরো সিস্টেমটাকে কোলাপ্স করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত আমরা মানব না’। তিনি রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘টাকা দেবো আমরা, পলিসি করবো আমরা আর আপনি খবরদারি করবেন!’
ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি রাজ্যপাল মনে করেন তিনি সব করবেন, তাহলে নির্বাচিত সরকারের কোনও দরকার নেই। আমি ওনাকে বারবার বলেছি, আমরা ইলেক্টেড। আর আপনি জাস্ট দেখানোর জন্য একটা নমিনেটেড পোস্ট। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন চিফ মিনিস্টারের থেকেও বড় তাহলে মনে রাখবেন, সমস্ত পলিসি ঠিক করে স্টেট গভর্নমেন্ট’। মমতা উপাচার্যদের উদ্দেশে বলেন ‘ভয় কেউ পাবেন না। উনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেবেন, কিন্তু মাইনে তো দিতে পারবেন না। প্রাক্তন উপাচার্যদের বলছি আপনারাই থাকবেন, কার কী করার আছে আমরা দেখছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবাই আমাদের পাশে থাকবেন’।
মমতা বলেন, উনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে পারেন, টাকা তো দিতে পারবে না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে বসে থাকুন। কেউ কেউ আবার ভাবছে ভাই যদি আমার মাইনে না দেয়, তাড়াতাড়ি চলে যাই। যাবেন না আমরা সব খবর রাখি, আমি এবার ব্রাত্যকে বলব, সব কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে একটা মিটিং করার জন্য। উপাচার্য তো এখন সব বদলে দিয়েছে। বেআইনি অথোরাইজড পার্সনস। প্রাক্তন উপাচার্যরা থাকবেন? হ্যাঁ। প্রাক্তন উপাচার্যরা থাকবেন। আপনারা আগামী দিনেও থাকবেন। কার কী করার আছে আমি দেখছি।
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানেও বাংলার মেধা নিয়ে গর্ব করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার ধনধান্যে শিক্ষারত্ন এবং সেরা বিদ্যালয় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের অনুষ্ঠানে ইসোরয় বাঙালি বিজ্ঞানীদের সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গর্ব করে বলি, ইসরো যে চন্দ্রযান পাঠালো সেই কাজে বাংলার ৩৮ জন ছিলেন। বাংলার মেধা, প্রতিভাকে সারা ভারতবর্ষ সেলাম জানায়।’ বাংলার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সব রকম সুবিধা আছে। ছেলে-মেয়েদের এরাজ্যে থেকেই পড়াশোনা করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি জানান, এ রাজ্যের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সেরার সেরা শিরোপা পেয়েছে। বাংলাতেই মেধাবীদের কাজ করার বার্তা দেন তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠান থেকে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে পড়ুয়াদের জন্য মোবাইল কেনার অর্থ সাহায্য করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এদিন জানান, গত তিন বছরে ২৭ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে এই অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে মোট ৩৭০০ কোটি টাকা। কোভিড এর সময় থেকেই এই প্রকল্প চালু করা হয়। পড়ুয়াদের পড়াশোনার স্বার্থে এই প্রকল্প সাফল্য লাভ করেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।