আবদুল ওদুদ: রাজ্যের সংখ্যালঘু বেকার যুবক-যুবতীদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের সেরা হল পশ্চিমবঙ্গ। গত শুক্রবার ছত্রিশগড়ের রায়পুরে অনুষ্ঠিত সেন্ট্রাল জোনের রিজিওনাল কনফারেন্সে দেশের সেরা ‘র্যাঙ্ক-১’ সাফল্য লাভ করে পশ্চিমবাংলা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা এডুকেশন দফতরের অধীনে থাকা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম দেশের মধ্যে ‘র্যাঙ্ক-১‘ গ্রেড অর্জন করেছে। ন্যাশনাল মাইনোরিটি ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ফাইনান্স কর্পোরেশন কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রকের একটি শাখা। এই শাখার মাধ্যমেই সংখ্যালঘু উন্নয়নে বিভিন্ন রাজ্যকে ঋণ প্রদান করে থাকে। ছত্তিশগড়ের রায়পুরে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে সংখ্যালঘু উন্নয়ন তহবিলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে শীর্ষে বাংলা। বিভিন্ন প্রকল্প সবচেয়ে সফলভাবে রূপায়ন করেছে পশ্চিমবাংলা। আর তারই জন্য কেন্দ্রেীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রক পুরস্কৃত করেছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমকে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারে ‘র্যাঙ্ক-১’ হয়েছে বাংলা। গত ৫ বছরের পারফরমেন্স বিবেচনা করেই এই সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। রায়পুরের অনুষ্ঠানে সাত থেকে আটটি রাজ্যের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। নজরকাড়ে পশ্চিমবঙ্গ।
প্রসঙ্গত, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু পরিবারের বেকার ছেলে-মেয়েদের আর্থিকভাবে সাবলম্বি করতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। এই ঋণ পেয়ে পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতী নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বছরে এই ঋণের জন্য বার্ষিক মাত্র ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। ঋণ প্রদান দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন বাংলা এগিয়ে, ঋণের অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। নিগম বেকার যুবক-যুবতীদের স্বল্প মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি স্কিমে লোন দিয়ে থাকে। এই ঋণ প্রকল্পের বেশিরভাগই জাতীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও অর্থনিগম থেকে প্রাপ্ত। গত আর্থিক বছরে বিত্ত নিগম থেকে ন্যাশনাল মাইনোরিটি ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ফাইনান্স কর্পোরেশন থেতে ৩৬১ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে।
গত ৮ বছরে স্বল্প মেয়াদি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নজির গড়েছে বাংলা। গত ৮বছর ধরে দেশের স্বল্প মেয়াদি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলা অন্যতম শীর্ষস্তান দখল করে রেখেছে। গত অর্থবর্ষে বরাদ্দ ঋণের পরিমান ১০৯ কোটি টাকা। এই খাতে ঋণের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে রাজ্যের ১০৭৬৪জন বাসিন্দা। রাজ্যের ১লক্ষ ৮হাজার ২০০জনকে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই ঋণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। এই ঋণের পরিমান ২১৭ কোটি টাকা। এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগমের চেয়ারম্যান ড. পিবি সালিম, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, জেনারেল ম্যানেজার, ম্যানেজার-সহ নিগমের অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সর্বোপরি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেক্ষেত্রে বাস্তবায়নের পথ অনেকটাই প্রশস্থ হয়েছে বিত্ত নিগমের মাধ্যমে। নিগমের এই প্রচেষ্টায় সংখ্যালঘুদের ঋণ প্রদানের পাশাপাশি সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম এনএএফটি, এমএসএমই, স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। এই সমস্ত কোর্স সম্পূর্ণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুবিধা পেয়েছেন বহু তরুন-তরুনী। কর্পোরেট সেক্টর থেকে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে চাকরী করছেন। সম্প্রতি সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম মুর্শিদাবাদে ৫ হাজার এবং মালদায় ১ হাজার দক্ষ রাজমিস্ত্রীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। দুই জেলায় কয়েক দফায় প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে।
বিত্ত নিগম রাজ্য সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়া করণ ও উদ্যান পালন দফতরের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছে। মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম এবং পূর্ব বর্ধমান জেলায় মাশরুম চাষের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। বেকার যুবক-যুবতী ছাড়াও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও এই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের সরকারি বৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও নজির গড়েছে বাংলা। রাজ্য সরকার ২০১৯—২০ সালে ঐক্যশ্রী প্রকল্প তৈরি করে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পড়ুয়াদের বৃত্তির অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করায় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই প্রকল্প চালু করেন। এরপর থেকে ঐক্যশ্রী প্রকল্পের বৃত্তি দেওয়া চালু করেন। গত আর্থিক বছরে ৪২ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়াকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। এতে ১হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগমের চেয়ারম্যান ড. পিবি সালিম নিয়মিত ভাবে সমস্ত প্রকল্পগুলি তদারকি করেন। ঋণ প্রদান থেকে শুরু দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষন, বৃত্তি প্রদান সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এছাড়াও আগামীতে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য কী কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়টি নিয়েও পর্যালোচনা করেন।