পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘আমি একদমই লজ্জিত নই’। গলা উঁচিয়ে বলছেন যোগীরাজ্যের এক স্কুলের অভিযুক্ত শিক্ষিকা। দেশে মুসলিম-বিদ্বেষ কোন পর্যায়ে গেলে ভরা ক্লাসরুমে বসে ‘মুসলমান’ ছাত্রকে পেটানোর নির্দেশ দিতে পারেন স্কুল শিক্ষিকা। মুজাফফরনগরের নেহা পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা তথা অধ্যক্ষার নির্দেশ মেনে হিন্দু সহপাঠীরা ৭ বছরের ওই পড়ুয়াকে একের পর এক থাপ্পড় কষিয়েছিল। এত মারের পরও খুশি হননি ওই শিক্ষিকা, ছাত্রদের বলেন, আরও জোরে থাপ্পড় মারতে হবে! সেদিন শিক্ষিকার নির্দেশ পালন করেছিল ক্লাসের পড়ুয়ারা।
ওই মুসলিম পড়ুয়া নির্যাতিত হচ্ছিল, অবাক চোখে একবার শিক্ষিকার দিকে দেখছিল, আবার তার সহপাঠীদের দিকে। ৭ বছরের ওই পড়ুয়ার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল। অসহায় শিশুর ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এবং আরও অনেকে এই ঘটনার নিন্দা করে ট্যুইটার করেছিলেন। নিগৃহীত শিশুটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো জেলাশাসক এবং পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেন্ডেট-এর কাছ থেকে ঘটনার বিশদে রিপোর্ট তলব করেছিল। একজন শিক্ষিকার সাম্প্রদায়িক মন্তব্যে অভিভাবকরা মহলও ক্ষুব্ধ।
এদিকে, তৃপ্তা ত্যাগী তাঁর লজ্জাজনক মন্তব্য এবং সহপাঠীদেরর দিয়ে ৭ বছরের পড়ুয়াকে মারধর করার জন্য সামান্যতম অনুতপ্ত নন। তিনি বলেন, ‘আমি লজ্জিত নই। আমি শিক্ষক হিসেবে এই গ্রামের মানুষের সেবা করেছি। তারা সবাই আমার সঙ্গে আছে।’ স্কুলে শিশুদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার প্রয়োজন বলে বলে তাঁর কর্মকাণ্ডকে সঠিক বলে প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সামান্যতম অপরাধবোধ তাঁর মধ্যে নেই বরং উল্টে তৃপ্তা ত্যাগী বলেন, ‘আইন তো বানিয়েছে লোকে, কিন্তু আমাদের স্কুলে শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এভাবেই আমরা তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করি।’ তৃপ্তা ত্যাগী এর আগে দাবি করেছিলেন, ভিডিয়োটি ফেক। নিগৃহীত শিশুটিরই এক ভাই যে কিনা নিজেও ক্লাসের পড়ুয়া, সে ভিডিয়োটি রেকর্ড করেছিল এবং পরে সেটাকে বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
এর আগে অবশ্য তিনি ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে বিতর্ককে ‘ছোট সমস্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অপরদিকে, ওই ছাত্রটির বাবা জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে কয়েকজন নেতা এসেছিলেন, যেসব ছাত্ররা তাঁর পুত্রকে ক্লাসে মেরেছিল তাদেরকে আনা হয়েছিল। নিগৃহীত ছাত্রটির সঙ্গে গলায় গলায় মিলিয়ে দেওয়ার পর শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। আবার একদল নেতা ওই শিক্ষিকার গ্রেফতার না হওয়া নিয়ে প্রশাসনের নিন্দা করেছেন।