বিশেষ প্রতিবেদন: পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা বাকশক্তি হারানো ব্যক্তিদের কথোপকথন পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে ব্রেন চিপ। এই ব্রেন চিপ প্রতি মিনিটে ৬২টি শব্দ পুনুরুদ্ধার করতে পারবে।
একটি স্নায়বিক রোগ ৬৮ বছর বয়সী প্যাট বেনেটের কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু তার মস্তিষ্ক যে কথা বলতে চায় সেটি সংকেত পাঠাচ্ছিল। বেনেটের কাছ থেকে ই-মেল পেয়ে তখনই বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষকরা প্যাটের মস্তিষ্কে বসানো ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রোড ডিভাইসের সাহায্যে তার স্নায়বিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাকে অ্যালগরিদমে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে গবেষক দল জানিয়েছেন, এই ব্রেন চিপ ৭৫ শতাংশের চেয়েও বেশি নির্ভুলতার সঙ্গে প্রতি মিনিটে ৬২টি শব্দ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।
গবেষকদের কথায়, গবেষণাটি একটি মাইলফল হতে চলেছে, যারা কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছে তাদের জন্য। আগের থেকে তিনগুণ বেশি দ্রুতহারে কাজ করবে। স্বাভাবিক কথোপকথনটি একসময় প্রতি মিনিটে ১৬০ শব্দে যোগাযোগে সাহায্য করবে। গবেষণাটি প্রযুক্তির উপরে নির্ভর করে দ্রুত উন্নত হচ্ছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারির অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের বর্ষীয়ান লেখক জেমি হেন্ডারসন জানিয়েছেন, আমরা খুবই আশাপ্রদ এই গবেষণা নিয়ে। তাই এটি প্রদর্শন করতে পেরে খুবই খুশি। হেন্ডারসন ব্রেন ইমপ্লান্টের জন্য বিকশিত প্রযুক্তিকে টেলিভিশনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেখানে পিক্সেল সংখ্যা বৃদ্ধি একটি তীক্ষ্ণ চিত্রের দিকে পরিচালিত করে।
গবেষণা বলছে, ৬৮ বছর বয়সী বেনেট অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্কেলোরোসিস( এলএএস) এ আক্রান্ত। এলএএস-একটি অবক্ষয়জনিত রোগ। এই রোগ ধরা পড়ার আগে তিনি একজন মানব সম্পদ পরিচালক এবং অশ্বারোহী ছিলেন। বেনেট নিজে থেকে হাঁটাচলা করতে ও কষ্ট করে টাইপ করতে পারেন, তাঁর মুখের গলার পেশিগুলি কথা বলতে চায়, কিন্তু তার কথা বোঝা যায় না।
স্ট্যানফোর্ড নিউজ রিলিজ অনুসারে বেনেট একটি ইমেলে গবেষকদের জানান, ‘আপনারা এএলএস রোগী মানেই হাত-পা অক্ষমতার কথা ভাবেন। কিন্তু আমি কথাবার্তা বলতে অক্ষম’। এর পরেই গবেষকরা পরীক্ষা করে বেনেটের স্নায়বিক কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করেন। বিজ্ঞানীরা চার মাস ধরে কম্পিউটার স্ক্রিনে বেনেটকে কথা বলানোর চেষ্টা করেন। বেনেটের পছন্দমতো শব্দগুলিকে চিনতে অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষিত করা হয়। তারপর এটিকে একটি ভাষা মডেলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ১২৫,০০০ শব্দের একটি শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করে, ২৪ শতাংশ শব্দ-ত্রুটি থাকলেও প্রতি মিনিটে ৬২ শব্দের হারে বেনেটের প্রচেষ্টার বক্তৃতা ডিকোড (কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষাকে মানুষের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করে) করেছে।
তবে হেন্ডারসন বলেছেন, এখনও এই ব্যবস্থাটি ত্রুটিমুক্ত হয়নি, তাই রোগীদের কার্যকলাপের উপযুক্ত নয়। নিউরালিংক, প্যারাড্রোমিক্স, প্রিসিশন নিউরোসায়েন্স এবং ব্ল্যাকরক নিউরোটেক এই কোম্পানিগুলি ত্রুটিমুক্ত ডিভাইসের জন্য কাজ করছে।
উল্লেখ্য, একটা সময় বেশ কিছুদিন ধরে ইলন মাস্ক এই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। কারণ তার নিউরালিংক কর্পোরেশন জানায়, যে তারা খুব শীঘ্রই মানুষের মাথায় একটি কয়েনের আকারের কম্পিউটিং ডিভাইস বসাবে। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, যে মানুষের মাথার খুলির একটি অংশ খোদাই করে এই মেশিন স্থাপন করা হবে এবং তার মাধ্যমে এটি মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগের ক্ষেত্রটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গতি পেয়েছে, ইলন মাস্কের নিউরালিংক দ্বারা জনপ্রিয় হয়েছে। কারণ বেশ কয়েকটি কোম্পানি মস্তিষ্কের নির্দেশনাগুলি শরীরে পড়ার জন্য প্রযুক্তি বিকাশ করে এবং সেগুলি সম্পাদন করতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ব্যবহার করে।
ইতিমধ্যে, কোম্পানি এবং গবেষকরা একটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সক্ষম করার মতো কীর্তি অর্জন করছে। ইতিমধ্যে ৪০ জনেরও বেশি লোকের মধ্যে ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি হয়েছে।