বিশেষ প্রতিবেদন
সোনারপুরে পুলিশ কর্মী সুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর মোদি পুলিশের কায়দায় যে নির্মম নির্যাতন চলানো হয়– তার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট
প্রেক্ষাপট
গত ৬ আগস্ট– ২০২১– সোনারপুর থানার অন্তর্গত বেনিয়াবৌ গ্রামের বাসিন্দা এবং পুলিশকর্মী সুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর হামলা– অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচার এবং গ্রেফতারির ঘটনা ঘটে। এই বর্বরোচিত ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন সোনারপুর থানার এসআই সোমনাথ দাস– এএসআই প্রিয়া সেন এবং ২০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমঃ
‘অধিকার’ ও ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম’ নামে মানবাধিকার সংস্থা এই বিচার বঞ্চিত এই পরিবারটি পুলিশের যে নৃশংস নির্যাতনের সম্মুখীন হয় তার তদন্ত করে। এতে ছিলেন মানবাধিকার কর্মী– আইনজীবী প্রমুখ।
পদ্ধতিঃ
পরিবারের আক্রান্ত– প্রত্যক্ষদর্শী এবং তাঁদের আইনজীবীর সরজমিন সাক্ষাৎকার (৩০ আগস্ট– ২০২১)
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
গত ৬ আগস্ট সকাল ৯টা-৪৫ নাগাদ সোনারপুর থানার এসআই সোমনাথ দাস এবং চার জন সিভিক ভলান্টিয়ার বেনিয়াবৌ গ্রামের বাসিন্দা– অশোকনগর থানার পুলিশকর্মী– ৩৭ বছর বয়সি সুরাফ হোসেনের বাড়িতে এসে হোসেন আলির খোঁজ করেন। সুরাফ মাঠের ওপারে হোসেন আলির বাড়ি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। প্রসঙ্গত– হোসেন আলি ওই পাড়ার একজন বৃদ্ধ। সোমনাথ দাস সিভিল ড্রেসে– চটি পায়ে এবং মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। সুরাফ হোসেন নিজে একজন পুলিশকর্মী হওয়ার কারণে আইন সম্পর্কে সচেতন। পুলিশকে সিভিল ড্রেসে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তাই তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের আসার কারণ জানতে চান। তখনই ‘শালা– মোল্লার বাচ্চা– আমাকে আইন শেখাতে এসেছিস বলে দেওয়ালে চেপে ধরে সুরাফের গলা টিপে ধরে ঘুষি মারতে থাকেন সোমনাথ দাস-সহ সিভিক ভলান্টিয়াররা।’ তাঁকে বাঁচাতে ছুটে যান সুরাফের আড়াই মাসের গর্ভবতী স্ত্রী তানিয়া পারভীন– তাঁকেও ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন সোমনাথ দাস। তাঁদের রক্ষা করতে গিয়ে মার খান সুরাফের ভাই আনোয়ার হোসেন– দাদা জাহাঙ্গির হোসেন এবং তাঁর বৌদিরা। আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাননি সুরাফের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মাও। সুরাফ হোসেনের বাড়িকে উদ্দেশ্য করে সোমনাথ দাস বলেন, ‘মোল্লার বাচ্চা– বাড়ি বানিয়েছিস’,তোদের বাড়ির সবক’টা ইট এক এক করে খুলে নিয়ে চলে যাব। এক রাউন্ড অত্যাচারের পর আরও পুলিশ বাহিনীকে ফোন করে ডাকেন সোমনাথ দাস। তিনটে জিপ এবং একটা প্রিজন ভ্যান-সমেত বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এএসআই প্রিয়া সেন (পুলিশ পোশাক পরিহিত) এবং পুলিশের পোশাকে সিভিক ভলান্টিয়াররা সেখানে উপস্থিত হয়। তারপরই শুরু হয় অত্যাচারের নতুন অধ্যায়। আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় যাঁরা একটু দূর থেকে ঘটনাটা দেখছিলেন– তাঁদের উপর যথেচ্ছভাবে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। প্রিয়া সেনের নেতৃত্বে সিভিক ভলান্টিয়াররা তিনবার সুরাফ হোসেনের জামা– লুঙ্গি ছিঁড়ে উলঙ্গ করে স্ত্রী ও কন্যার সামনে বেধড়ক মারতে থাকে। প্রিয়া সেন নিজে সুরাফ হোসেনের যৌনাঙ্গে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঘাত করেন এবং লাথি মারেন। মারতে মারতে তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রিয়া সেন বলেন,’মোল্লার জাত হয়ে তোর স্বামীর চাকরি কি করে থাকে আমি দেখছি।’ চারটে লাঠি এবং ফাইবার স্টিক মারতে মারতে ভেঙে ফেলেন তাঁরা। তারপর বাড়ির পাশে ঝুলিয়ে রাখা দড়ি দিয়ে সুরাফকে হাত– পা– গলা-সহ বেঁধে একটা প্লাস্টিকে জড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে যান তাঁরা। মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সুরাফের জ্ঞান ফিরলে সোমনাথ দাস তাঁকে ‘শালা মোল্লার জাত’ বলে কটূক্তি করে। একই সুরে ‘এই মোল্লাদের শায়েস্তা করতে হবে বলে অশোক নস্কর– জয় মণ্ডল এবং বিপ্লব নামের সিভিক ভলান্টিয়ার সুরাফের দুই বউদি আয়েশা ও রেহানা পারভীনকে মারতে শুরু করে। সুরাফের স্ত্রী তানিয়া পারভীন আমাদের বলেন– ‘গর্ভবতী জানা সত্ত্বেও প্রিয়া সেন ও সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর পেট ব্যথা এবং রক্তস্রাব শুরু হয়ে যায়। সুরাফের ১৩ বছর বয়সি কন্যা ক্লাস নাইনে পাঠরতা সামরিনা পারভীন ফোনে সমস্ত ঘটনার ভিডিয়ো করতে শুরু করলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় প্রিয়া সেন বাড়িতে ঢুকে তাকে থাপ্পড় মেরে ফোন কেড়ে নেয়। এরপর বাড়ির সমস্ত জিনিস তছনছ করে এবং সোনার আংটি– কানের দুল– গলার চেন-সহ কিছু মূল্যবান সম্পদ লুঠ করে নিয়ে চলে যায়। অনলাইন ক্লাসের জন্য ব্যবহার করা সামরিনার সেই ফোন পুলিশ এখনও ফেরত দেয়নি। সুরাফের এক বউদিকে ভিডিয়ো করতে থেকে প্রিয়া ও সোমনাথের উন্মত্ত বাহিনী তাঁরও বাড়ি ভাঙচুর করে কিন্তু সমস্ত প্রমাণ লোপাট করতে তাঁরা পারেননি। এভাবে চল্লিশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে অত্যাচার চালান সোমনাথ দাস এবং প্রিয়া সেনের নেতৃত্বে সোনারপুর থানার পুলিশ। তারপর সুরাফ হোসেন– তাঁর স্ত্রী– দাদা ও ভাইদের গ্রেফতার করে দ্রুততার সঙ্গে আদালতে চালান করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে বারুইপুর জেলা হেফাজত। ৮ আগস্ট জামিন পান তানিয়া পারভীন এবং সুরাফ হোসেন। তাঁর ভাইরা জামিন পান ১২ আগস্ট। এখনও এলাকার মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত।
সুরাফের স্ত্রী তানিয়া জানিয়েছেন– থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়া সেন তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশ্য করে বলেন– তোরা বন্দুক এনেছিস কি করতে? গুলি করে সবক’টা মেরে দিতে পারলি না? এই মোল্লার জাতদের একদম শেষ করে দেওয়া উচিত’। তখন সুরাফ বমি করছেন– অর্ধেক শরীর গাড়ি থেকে বাইরে ঝুলছে। সেই অবস্থায় গাড়িতে উঠে এসে নিজের বুট দিয়ে প্রিয়া সেন সুরাফের তিনটে আঙুল থেতলে দেন। আক্রান্তদের আলাদা আলাদা গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে কালিকাপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে প্রত্যেক আক্রান্তের নামে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ ইস্যু করিয়ে নেওয়া হয়। তানিয়া পারভীন গর্ভবতী ছিলেন বলে কোনও ওষুধ খেতে চাননি। কিন্তু প্রিয়া সেন জোর করে তাঁকে একটা ইনজেকশন এবং একটা ট্যাবলেট খাইয়ে দেন। পুলিশরা নিজেরা ব্যান্ডেজ বেঁধে– বরফ লাগানোর ছবি তুলে এবং প্রিয়া সেন জামার বোতাম খুলে আক্রান্ত বলে দাবি করতে থাকেন। থানায় পৌঁছে সুরাফ সোনারপুর থানার বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে এবং অশোকনগর থানার বড়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। জেলে পৌঁছে তানিয়ার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর গর্ভপাত হয়ে গেছে। তাঁর এই অবস্থার জন্য দায়ী প্রিয়া সেন এবং ওই সিভিক ভলান্টিয়াররা।
সুরাফ হোসেন একসময় অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন– পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন। তাঁর এই প্রতিভার জন্য পাড়ায় সবাই তাঁকে খুব সম্মান করেন। জেলে থাকাকালীন এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সুরাফ আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন।
মোট ১২টি ধারায় সুরাফের বিরুদ্ধে কেস সাজানো হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ (দাঙ্গার চেষ্টা)– ১৪৮ (সশস্ত্র উপায়ে দাঙ্গার চেষ্টা)– ১৪৯ (সংগঠিত অপরাধ)– ১৮৬ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে বাধাদান)– ১৮৯ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে খুনের হুমকি)– ৩৩২ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়া)– ৩৩৩ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে প্রচণ্ড আঘাত করা)– ৩৫৩ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে জখম করা)– ৩০৭ (খুনের চেষ্টা)– ৩৭৯ (চুরি)– ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ৩০৬ (ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি)। ২৪ ঘণ্টার বেশি জেলে কাটানোর জন্য এবং বর্তমানে কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে ১২টি ধারায় কেস চলার কারণে অশোকনগর থানা থেকে সুরাফ হোসেনকে সাসপেনশন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এই কেসে অভিযুক্তদের তালিকায় নামবিহীন ৭-৮ জন ‘and others‘ উল্লেখ করে যখন যাকে খুশি তুলে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে রেখেছে।
ইনসাফের লড়াই চলছেঃ
সুরাফ হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে আমাদের বলেন– মানুষের মধ্যে মানুষ আর নেই। সোমনাথ দাস আর সিভিক ভলান্টিয়াররা ড্রেস কোড না মেনে বয়স্ক হোসেন আলিকে গ্রেফতার করতে আসে। নিজে একজন পুলিশকর্মী হিসেবে ন্যায্য প্রশ্ন করাতেই তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে এই অত্যাচারের মুখে পড়তে হল। সুরাফের আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী আনিসুর রহমান অভিযোগ করেছেন যে– পুলিশ গ্রেফতার করতে এসে কাউকে শারীরিক নিগ্রহ করতে পারে না এবং তাঁর নিজের ড্রেস কোড মেনে গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর কথা। আনিসুর রহমানের মতে– নিজেদের এই খামতিগুলো লুকাতে সোনারপুর থানার অ্যাডিশনাল ওসি প্রশান্ত দাস সুরাফের বিরুদ্ধে হোসেন আলিকে গ্রেফতার করতে বাধা দেওয়া এবং পুলিশকে শারীরিক নিগ্রহ করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে– প্রিয়া সেন ছাড়া আর অন্য কোনও মহিলা পুলিশের অনুপস্থিতিতে কী করে তানিয়া পারভীন এবং তাঁর জা-দেরকে স্পর্শ করল পুলিশ? তাছাড়া তানিয়ার গর্ভপাতের জন্য সোমনাথ দাস– প্রিয়া সেন এবং তাঁদের বাহিনীই দায়ী। সুরাফের পরিবার অভিযোগ করেছেন যে– এলাকার অনেকে তাদের জানিয়েছেন– এই ঘটনায় যুক্ত সিভিক ভলান্টিয়াররা বিজেপি-আরএসএস-এর সঙ্গে জড়িত। সুরাফ হোসেনের মতে– বৃদ্ধ হোসেন আলি মানসিকভাবে সবল নন।
বৃদ্ধ হোসেন আলির বিরুদ্ধে কি মামলা ছিল?
আনিসুর রহমান জানিয়েছেন– ২০১৯ সালে জীবনতলা থানার জমি সংক্রান্ত একটি কেসে হোসেন আলির নাম ছিল। এই কেসে আলিপুর এসিজেএম কোর্টের নির্দেশানুসারে পুলিশ ১০ জনের নামে একটি চার্জশিট তৈরি করে। যার মধ্যে হোসেন আলির ঠিকানা কুলিবেরিয়া নামক একটি গ্রাম– যা সোনারপুর থানার অন্তর্ভুক্তই নয়। আবার পুলিশের স্টেটমেন্টে এক জায়গায় হোসেন আলি পরিবর্তে হোসেন গাজির নাম উল্লেখ রয়েছে! ফলে হোসেন আলিকে গ্রেফতার করার বিষয়টাও বেশ গোলমেলে।
পুলিশের এই বর্বরোচিত আচরণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিচার এবং অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি– মাইনরিটি কমিশন– স্টেট পুলিশ ডিজি– বারুইপুর থানার এসপি– এসডিপিও– সোনারপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ– রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি পাঠিয়েছেন সুরাফ হোসেনের পরিবার। এখনও পর্যন্ত কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি। সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক লাভলি মৈত্রকে চিঠি পাঠালেও সাড়া মেলেনি। সুরাফের পরিবার ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই তাঁদের এলাকায় তোলাবাজির বিরোধিতা করায় তৃণমূল এই ঘটনায় তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। তাছাড়া অভিযুক্ত এসআই সোমনাথ সাহা এবং সিভিক ভলান্টিয়ার অশোক নস্কর সরাসরি ওই এলাকার তোলাবাজির চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। কোথাও বিচার না পেয়ে আক্রান্ত সুরাফ হোসেন আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। অবশ্য তাঁদের এই ইনসাফের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন গণসংগঠন।
মূল্যায়নঃ
তোলাবাজির বিরোধিতা করায় আঞ্চলিক পুলিশের টার্গেট হয়েছেন সুরাফ এবং তাঁর পরিবার। হোসেন আলিকে গ্রেফতার করতে আসার অছিলায় সুরাফ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। এর সঙ্গে সমানভাবে যুক্ত হয়েছে পুলিশের জঘন্য সাম্প্রদায়িক চরিত্র– বেকসুরের উপর অত্যাচার এবং শাসক দলের নীরবতা এই দুষ্টচক্রের মুখোশ ফাঁস করে দিয়েছে।
‘অধিকার’ ও ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম’এর দাবিঃ
১. অবিলম্বে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে।
২. সোমনাথ দাস– প্রিয়া সেন এবং অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সুরাফ হোসেন এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
৪. সুরাফ হোসেনকে কর্মক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মান-সহ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সুরাফ হোসেনের বাড়ি থেকে লুঠ হওয়া সোনার গয়না– মোবাইল ফেরত দিতে হবে।
৫. মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে রাজ্য পুলিশের নির্লজ্জ এই সাম্প্রদায়িক অচরণের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে।
৬. পুলিশ ও যেকোনও রাজনৈতিক দলের তোলাবাজির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. সিভিক পুলিশকে আইন বহির্ভূতভাবে কোনও পুলিশি অভিযানে শামিল করা যাবে না।
মানবাধিকার সংস্থার এই রিপোর্টটি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে সুবিচার চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে সংখ্যালঘু একটি পরিবারের উপর খোদ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যোগী রাজ্যের মতো যে ধরনের নির্যাতন করেছে তার বিচার না হলে সংখ্যালঘুদের উপর নানা অজুহাতে আক্রমণের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। দুঃখের কথা হল– পশ্চিমবঙ্গের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই খবরটিকে গুরুত্ব দেয়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের উপর পুলিশি অত্যাচার ও নির্যাতিতদের ছবি-খবর এখন ভাইরাল। অনেকে দাবি করেছেন– এএসআই প্রিয়া সেনের নেতৃত্বে যেভাবে গর্ভবতী মহিলাকে আক্রমণ করা এবং তাঁর সন্তান পেটেই নিহত হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন এবং ওই ভদ্র মহিলা ও তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া সরকারের কর্তব্য।
এ দিকে বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও নামকরা ওয়েবসাইটে কিন্তু এই খবরটি ছবি-সহ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিস্তা শেতলাবাদ সম্পাদিত ‘সব রং’– ‘মুসলিম মিরর’– ‘মকতুব’– ‘আনন্দ বাজার পত্রিকা’– ও ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবশ্য পুলিশের দেওয়া রিপোর্টটাই ছেপেছে। রিপোর্টটির শিরোনাম ‘villagers, constable attack cops’ থেকে তা বুঝতে পারা যায়।