পুবের কলম প্রতিবেদক: বাড়ি থেকে মশার উৎপাত চিরতরে আটকাতে বাগানে, টবে বসান এই গাছগুলি। তাহলে মশা আর আপনার ধারেকাছে ঘেঁষবে না। বহু মানুষই মশা তাড়াতে ঘরে কয়েল, ধূপ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এগুলি শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকারক। কিন্তু এই গাছগুলি আপনার কোনও ক্ষতিও করবে না, উল্টে আপনার জন্য উপকারি করবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক মশা প্রতিরোধগুলি গাছগুলি সম্পর্কে:
১)রোজমেরি: মশার জ্বালাতন কমাতে সেরা উদ্ভিদের মধ্যে রোজমেরি অন্যতম। রোজমেরির গন্ধ মশা কীটপতঙ্গদের একদম পছন্দ নয়। মশা ছাড়াও গাজর মাছিদের অযথা উৎপাত বন্ধ হয়। রোজমেরির গন্ধে এরা কেউই বাড়ির ধারেকাছে ঘেঁষবে না।
২) লেমন বাম: বাংলায় খুব একটা পরিচিত না হলেও যাঁরা বাগান করতে ভালোবাসেন, তাঁদের অনেকেই এই গাছটি সম্পর্কে জানেন। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ার বহু দেশে এই গাছ দেখা যায়। বিজ্ঞানসম্মত নাম, মেলিসা অফিসিনালিস। এই গাছের পাতা বেটে শরীরে বেটে লাগালেই মশা পালাবে।
৩) হর্সমিন্ট: হর্সমিন্ট, বেবলাম নামেও পরিচিত। মশা তাড়ানোর জন্য কার্যকর। গাছটি ২-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এই গাছপালা সমুদ্রের তীরে জন্মায় এবং উপকূলবর্তী এলাকা থেকেই সংগ্রহ করা যায়। বাগানে এবং টবে জন্মানোর পাশাপাশি জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা যায়। মশা প্রতিরোধ করার জন্য টবে জন্মানো গাছগুলি করিডোর, জানালা এবং দরজায় রাখা যেতে পারে।
৪) গাঁদা বা মেরি গোল্ড: গাঁদা ফুল প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায়। আমাদের দেশের যেকোনও নার্সারি থেকে এই গাছের চারা সংগ্রহ করা যায়। এই গাছ বাগানের সৌন্দর্য বাড়ায়। গাঁদা ফুলের তীব্র গন্ধ মশাদের পছন্দ নয়। এই গাছটিকে টবে চাষ করে বাড়ির জানালা বা দরজার কাছে রাখলে এই গাছের ফুলের গন্ধে ঘরে মশা প্রবেশ করবে না। এই গাছের ফুল টম্যাটো গাছের কীটপতঙ্গ প্রতিরোধক। টম্যাটো ক্ষেতের চারপাশে এই ফুলের চারা চাষ করলে টম্যাটো পোকার আক্রমণও কম হয়।
৫) তুলসী গাছ: প্রায় প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে তুলসী গাছ থাকে। এই গাছে মশাদের লার্ভা টিকতে পারে না। এই গাছের কড়া গন্ধ মশার সঙ্গে অন্যান্য পোকামাকড়দেরও ঘর থেকে দূরে রাখে।
৬) লেমনগ্রাস বা লেবুঘাস: মশা তাড়াতে লেমনগ্রাস বা লেবুঘাস গাছ অত্যন্ত কার্যকরী। এই গাছ থেকে নির্গত গন্ধ মশা তাড়াতে খুব উপযোগী।
৭. দূর্বা ঘাসঃ শরীরের কোনও স্থানে কেটে গেলে দূর্বা ঘাস জল ছাড়া বেটে অথবা চিবিয়ে কাটা স্থানে বসিয়ে দিলে রক্তপড়া খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয় আর কাটাস্থানে তাড়াতাড়ি জোড়া লেগে যায়। রক্তপড়া বন্ধ করার এটি একটি অব্যর্থ প্রচেষ্টা। তবে দূর্বা ঘাসের গন্ধ প্রাকৃতিক উপায়ে মশাদের ঘর থেকে দূরে রাখে।
৮ . ল্যাভেন্ডার: ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধ যেমন আপনার মনকে সতেজ রাখে, তেমনি তা আপনার ঘর থেকে মশা, মাছি বা অন্যান্য পোকামাকড়কেও দূরে রাখে। এই গাছটির জন্য ন্যূনতম পরিচর্যা প্রয়োজন। হাল্কা বেগুনি রঙের এই ফুল হয় গুল্ম জাতীয় গাছে। এটি আসলে একপ্রকার ভেষজ উপকরণ। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে, থেরাপির কাজে এই ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করা হয়।
৯) ক্যাটনিপ গাছ: পুদিনার মতো দেখতে এই গাছটিতে একটি প্রাথমিক উপকরণ আছে যার নাম নেপেটালাক্টোন, যা প্রায় বেশিরভাগ পোকা মারার ওষুধে ব্যবহৃত হয়। একধরনের আগাছা জাতীয় বুনো গাছ। অনেক বিড়াল এর গন্ধ শুঁকতে খুবই পছন্দ করে, চিবায় এবং অনেক সময় খায়। এটা শরীরের জন্য ভালো এবং হজমে সাহায্য করে। এই গাছের গন্ধ পছন্দ নয় পোকামাকড়, মশা-মাছিদের।
প্রসঙ্গত, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। আর ফের ডেঙ্গু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মশা থেকে বাঁচতে মানুষকে সচেতন করার জন্য চলছে শিবির, রাজ্যের পুরসভাগুলির তরফ থেকেও ঘরে ঘরে গিয়ে মশার তেল, স্প্রে ছড়ানোর কাজ চলেছে। এছাড়াও পুরকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে বালতি, গামলায়, টবে জল জমিয়ে না রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।