পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘মুসলিম বয়কট’ প্রত্যাহারের পরেও, হরিয়ানা নুহে শ্মশানের স্তব্ধতা। হিংসা বিধ্বস্ত হরিয়ানা নুহ। চারিদিকে শুধু থমথমে পরিবেশ। দাঙ্গার পরে গ্রামে কোনও মুসলিম নেই, শুধু রয়েছে হিন্দুরা। সুনীল কুমার নামে এক নিরাপত্তারক্ষী জানিয়েছেন, এখন গ্রামে শুধু হিন্দুরাই রয়েছে। বয়কটের নির্দেশের পরেই আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে মুসলিমরা। কিন্তু এই রকম পরিবেশ দেখতে অভ্যস্থ নয় নুহ। একটা ঘটনাতেই সব পালটে গেল।
ঝাজ্জারের বিভাগীয় কমিশনার কাবলানা ও মুন্ডা হেদা গ্রামে দুই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে শো-কজের নোটিশ দিয়ে মুসলিম বয়কটের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
সাহারানওয়াসে গ্রামে পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণা তার বয়ানে জানিয়েছেন, ‘যে চিঠিটি মুসলিমদের নিষিদ্ধ করার কথা নজরদারির কারণে লেখা হয়েছিল। আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।” কাবলানার পঞ্চায়েত প্রধানও চিঠি পাঠিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
বিকাশ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, পালটে গেল নুহ। হরিয়ানার সাহারানওয়াস গ্রামে প্রবেশে ঠিক আগেই মূল রাস্তার উপর একটি মাজার রয়েছে। তার পাশে রয়েছে একটি গাছ। সেখানে হিন্দু দেবতাদের ছবি ঝোলানো আছে। চারদিকেই রয়েছে সাম্প্রদায়িকতার নজির। কিন্তু এই গ্রামেই এখন অন্য চিত্র। সম্প্রতি দাঙ্গার কারণে এখন মুসলিমদের বয়কট করতে বলা হয়েছে। সাহারানওয়াস রেওয়ারি সেই গ্রামগুলির মধ্যে একটি। যেখানে সম্প্রতি বয়কটের ডাক জারি করা হয়েছে, স্থানীয়দের সঙ্গে মুসলিমদের ব্যবসা না করার এবং তাদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। বুধবার গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান আগের বক্তব্য প্রত্যাহার করে একটি বিবৃতি দেন চিঠির আকারে।
রেওয়ারি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চিমনাওয়াসে গ্রামের পঞ্চায়েত একই ধরনের বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। সাহারানওয়াসের পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণা বলেন, ‘মুসলিমদের প্রতি আমাদের কোনও অসন্তোষ নেই। আমরা শুধু বলেছি যারা সহিংসতা সৃষ্টি করে তাদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। কৃষ্ণার স্বামী প্রাক্তন প্রধান বিজয় সিং দাবি করেন, এই বয়কটের ডাকটি দিয়েছিলেন গো-রক্ষকরা। যারা বলেছিল, মুসলিমদের এই গ্রামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না’।
তবে এবার বয়কটের ডাক প্রত্যাহার নিয়েও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। দেশরাজ নামে এক গাড়ি চালকের মতে, এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে গ্রামে দুষ্কৃতীরা সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে।
রেওয়ারি শহরে দেবেন্দ্র নামে এক দোকানদার বলেছেন, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় মসজিদে দুই পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। নুহের ঘটনার পর কিছু শ্রমিক শহর ছেড়ে চলে গেছে।
সাহারানওয়াস থেকে আট কিলোমিটার দূরে সুন্দরজ গ্রামে হাসান নামে এক সুগন্ধি বিক্রেতা জানিয়েছেন, ওই গ্রাম থেকে অনেক দূরে থাকি, আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সুগন্ধি বেচার জন্য আমাকে অনেক জায়গা ঘুরতে হয়, কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি। আমাদের গ্রামে সব ধর্মের মানুষের মিলেমিশে বাস। তবে রেওয়ারি গ্রামে দাঙ্গার পর কিছু শ্রমিককে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।