পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: নতুন করে দেখা দিয়েছে চোখের রোগ কনজাংটিভাইটিস। পশ্চিমবঙ্গে অনেকে একে ‘জয় বাংলা’ বলে থাকেন। বন্যাকবলিত দিল্লি ও কলকাতায় বহু মানুষের চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। ভাইরাসঘটিত এই রোগ একজনের কাছ থেকে ছড়াচ্ছে আরেকজনের কাছে। কোনও পরিবারে সব সদস্যই আক্রান্ত হয়েছেন কনজাংটিভাইটিসে।
দিল্লিতে বন্যার জন্য আবাসনের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে সবাইকে। আবার ডুবে যাওয়া বসতি থেকে অনেককেই উদ্ধার করে রিলিফ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কনজাংটিভাইটিস ও স্কিন অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে অ্যাডিনোভাইরাসের নয়া স্ট্রেইনের ফলেই এই রোগ হচ্ছে। কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের প্রভাস প্রসুন গিরি জানাচ্ছেন, এটি প্রচণ্ড ছোঁয়াচে রোগ। তাই অতি সহজেই একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ জানান, দিল্লির বন্যাত্রাণ শিবিরগুলি থেকেই কনজাংটিভাইটিসের কেসগুলি বেশি আসছে। সেখানে সবাই বদ্ধ জায়গাতে থাকছে। তাই রোগটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। কেজরিওয়াল সরকার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছে বিষয়টি। ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াও বাড়ছে বন্যাকবলিত দিল্লিতে। সবা রোগকে ছাপিয়ে গেছে চোখের এই বিশেষ রোগটি।
অন্যদিকে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে অনেক দিন পরে আবারও ‘জয় বাংলা’ কথা খুব শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের (১৯৭১) সর্বাধিক পরিচিত স্লোগান হলেও এখন যে ‘জয় বাংলার’ কথা শোনা যাচ্ছে, তা আসলে ‘চোখ ওঠা’ রোগ বা কনজাংটিভাইটিস। ৭১-এর যুদ্ধের সময়ে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে চোখ ওঠা রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় থেকেই কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগকে ‘জয় বাংলা’ বলে থাকেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।
যুদ্ধের সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এ দেশে আসা শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরগুলি থেকেই পশ্চিমবঙ্গে চোখ ওঠা রোগটি ছড়িয়েছিল বলে মনে করা হলেও ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের মতো প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা গবেষণাপত্রসহ একাধিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে ১৯৭১ সালে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই রোগটি ছড়িয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের লখনউতে সে বছর কনজাংটিভাইটিসকে মহামারি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তার পরেও মাঝে মাঝে কনজাংটিভাইটিস দেখা গেলেও বহু বছর পরে ২০২৩ সালে আবারও ব্যাপকভাবে দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছে ‘জয় বাংলা’।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক উদয়াদিত্য মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, আমাদের হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৬ শতাংশ রোগীই কনজাংটিভাইটিস নিয়ে আসছেন।
বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যাটা আরও বহু গুণ বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা, কারণ কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হলে সিংহভাগ রোগীই ডাক্তারের কাছে আসেন না। এমনিতেই তিন-চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। যাদের বাড়াবাড়ি হয়, তারাই শুধু হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাক্তারের কাছে আসেন।