বিশেষ প্রতিবেদন: সুস্থ থাকার জন্য ভালো আর পরিপূর্ণ ঘুম সবারই প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে রাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাতের ঘুমের মতোই জরুরি স্বল্পকালীন দিবানিদ্রা। কারণ এটি কাজের কর্মক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ইসলামে এই স্বল্পকালীন দিবানিদ্রাকে ‘কাইলুলা’ বলা হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেছিলেন ‘কাইলুলা’ মানুষের শরীর ও মনকে কর্মমুখী হতে সহায়তা করে। প্রায় দেড় হাজার বছর পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও একমত হয়ে এই ‘কাইলুলা’কে সমর্থন করছেন।
ছোট থেকেই আমরা শুনে আসি ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়া আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া শরীর ও মন ভালো, সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু দিবানিদ্রার ব্যাপারে সেইভাবে কিছু বলা হয় না। দিনের বেলা এবং ব্যস্ত সময়সূচীর মধ্যে কিছু সময়ের জন্য ঘুমানোর অভ্যাস আমাদের শরীরের ক্লান্তি কমিয়ে পুনরায় সচল করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি কাজের কারণে ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে শরীরকে চনমনে করতে দিবানিদ্রাকে আপনি আপনার দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে রাখতেই পারেন। তবে আপনার ঘুমের সময় এবং আপনি কতক্ষণ ঘুমান সে সম্পর্কে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। দিবানিদ্রা আপনার রাতের ঘুমকে ব্যাঘাত ঘটাবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে স্বল্পকালীন দিবানিদ্রার সাতটি স্বাস্থ্য সম্মত উপকারিতা আছে,
১) স্বল্পকালীন নিদ্রা আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম। এমনকী রাতে কম ঘুম হলেও দিবানিদ্রা আপনাকে সুস্থ রাখতে শরীরে স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।
২) স্বল্পকালীন দিবানিদ্রা খুবই উপকারি যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের জন্য। যে সব কর্মীদের কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই তাদের জন্যও দিবানিদ্রা উপকারি।
৩) গবেষণা বলছে, দুপুরে স্বল্পকালীন নিদ্রা কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে। ন্যাশনাল হার্ট, লাংস এবং ব্লাড ইনস্টিটিউট (এনএইচএলবিআই) অনুসারে, একটি দিবানিদ্রা স্মৃতিশক্তি, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, জটিল কাজগুলি সম্পূর্ণ করার দক্ষতা তৈরি করে।
৪) মায়ো ক্লিনিকের মতে, অল্প সময়ের জন্য একটি ঘুমও শারীরিক কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন অনুসারে, স্বল্পকালীন দিবানিদ্রা নেওয়ার জন্য ক্রীড়াবিদদের অনেক বেশি পরিমাণে সহনশীলতা, সময়জ্ঞান, কর্মদক্ষতা রয়েছে।
৫) স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, সপ্তাহে এক বা দুইবার স্বল্পনিদ্রা নিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য হৃদরোগের মতো কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলির ঝুঁকি কম থাকে।
৬) প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে অবিচ্ছিন্ন রক্তনালীর ত্রুটি রয়েছে। একে ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজম বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ফাটে না। প্রায় ২.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজম ফেটে যেতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু স্বল্পকালীন দিবানিদ্রা এই বিপদ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে।
৭) ঘুম স্মৃতি শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর দিবানিদ্রা পুরো রাতের ঘুমের মতোই আগে শেখা স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। অতএব ঘুম আপনার কাজের দক্ষতা, সংবেদনশীল উপলব্ধি, তাৎক্ষণিক কিছু মনে রাখার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।