বিশেষ প্রতিবেদন: গবেষণার কাজে গিয়ে ১৯ দেশের শতাধিক মসজিদ ভ্রমণ করেছেন জার্মান তরুণ বিলাল হিগো। মূলত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ ও ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভের লক্ষ্যেই তিনি মসজিদে মসজিদে দীর্ঘ সময় কাটান। নামাযের পাশাপাশি মসজিদকেন্দ্রিক পড়াশোনা, গবেষণা ও অন্যান্য কাজ করে সময় কাটে তাঁর। ইসলামি পরিচয়ের বৈচিত্র্য অনুসন্ধান করে নিজের বিশ্বাসকে নতুন করে আবিষ্কারের চেষ্টা করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস ছিল নবী সা.র একটি হাদিস।
একদিন রাসুল (সা.) ইবনে উমর (রা.)-র কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘তুমি পৃথিবীতে মুসাফির বা পথিকের মতো বসবাস কোরো। বিলাল ইংল্যান্ডের ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে’ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মনোবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর ২০২১ সালে তিনি ‘জার্মানির মুসলিমদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয় সংকট’ বিষয়ক গবেষণার কাজ সম্পন্ন করেন।
এ বিষয়ে গবেষণার কাজে তাকে উল্লেখযোগ্য সময় মসজিদে ব্যয় করতে হয়। বর্তমানে তিনি একজন কাউন্সেলিং থেরাপিস্ট ও কালচারাল সাইকোলজিস্ট রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন।
বিলালের মতে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্য উপলব্ধি ও তা গ্রহণের ক্ষেত্রে এ ধরনের পবিত্র স্থানগুলো ভ্রমণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত দুই বছর তিনি তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, মিশর ও সউদি আরবসহ বিশ্বের ১৯টি দেশ ভ্রমণ করেন। এসব দেশের অনেক মসজিদ ভ্রমণ করে সেখানকার সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানেন এবং মুসলিমদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উপলব্ধির চেষ্টা করেন।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিন সপ্তাহের জন্য জার্মানির মিউনিখ থেকে তুরস্কের ইস্তান্বুলে যান বিলাল। এরপর শুরু হয় তাঁর ১০০ মসজিদ ভ্রমণের পর্ব।
১৬১৬ সালে নির্মিত তুরস্কের ঐতিহাসিক ব্লু মসজিদ ভ্রমণের মাধ্যমে বিলাল ও তাঁর মিত্র করিমের ভ্রমণ শুরু হয়। এরপর তারা বিলেসিক, আফিয়ন, আকসারে ও জোংগুলডাক প্রদেশ ভ্রমণ করেন। এসব স্থানে পর্যটকদের তেমন যাতায়াত না থাকলেও স্থানীয় অনেক মসজিদ তারা পরিদর্শন করেন। বসনিয়ার সারাজেভোতে উমর বিন খাত্তাব মসজিদে নামায পড়ার মাধ্যমে তাদের ১০০ মসজিদ ভ্রমণের চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন হয়। তুরস্কের আকসারায় প্রদেশের আনাতোলিয়ান শহরে অবস্থিত একটি ছোট মসজিদ তাঁর খুব ভালো লেগেছে বলে জানান বিলাল। বিলাল বলেন, ‘গুগল করে একটি মসজিদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাথরে খোদাই করা এই মসজিদের সন্ধান পাই। খুবই সাধারণ এ মসজিদের কথা আমি কখনও ভুলব না। তা আমাকে পবিত্র কুরআনে সুরা রহমানের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। কারণ এতে মুমিনদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। করিম সেখানে আযান দেওয়ার পর আমরা একসঙ্গে নামায পড়ি।’ দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণকালে কেপটাউনের রবেন দ্বীপের একটি মসজিদে নামায পড়ার কথাও জানান বিলাল। কারণ সেখানে নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর ২৭ বছরের কারাবাসের শেষ ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন। মসজিদ ভ্রমণের মূল শিক্ষা প্রসঙ্গে বিলাল বলেন, ‘মুসলিম সমাজে গায়ের রং বা জাতীয়তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মুসলিম হলেই সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা দেখা যায়।’