দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: একদিকে ঘেরাও থেকে মুক্তি চেয়ে উপাচার্যের আচার্যকে চিঠি, অন্যদিকে আন্দোলন জারি রেখে পড়ুয়াদের গান্ধীগিরি অব্যাহত বিশ্বভারতীতে। তার আগে অবশ্য ভিসিকে খাবার দিতে আসা বাইককে ধাওয়া করে পড়ুয়ারা। জানা গেছে, বাইকে করে দুই আরোহী পাঁউরুটি, পেঁয়াজ, আলু দিতে আসে। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বক্তব্য, তারা যা খাবে, তাই খেতে হবে। বাইরে থেকে খাবার আনা যাবে না। আশ্রম তোলপাড় পড়ুয়াদের হুঁশিয়ারিতে, ‘দড়ি ধরে মারো টান, ভিসি হবে খান খান’। এদিন উপাচার্যর বিরুদ্ধে জেলা কংগ্রেস একটি মিছিল বের করে বোলপুরে। পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ৩৮ পাতার এই রিট পিটিশনের রাজ্য সরকারের উদাসীনতার পাশাপাশি, ছাত্রদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি বলে খবর।
বুধবার সকালে বিশ্বভারতীর উপাচার্য ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে পড়ুয়ারা দুধ কলা পাউরুটি তুলে দেন। এবার থেকে প্রতিদিন তিনবেলা খাবার পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
তিন পড়ুয়াকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাস গৃহের সামনে, শুক্রবার থেকে আন্দোলনে চালাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ইতিমধ্যে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, পৌষ মেলা বাঁচাও কমিটি, বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের একাংশ, আলাপিনী সমিতি ও মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এবং তাবৎ বাম ছাত্র সংগঠন ধরনা মঞ্চে এসে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। বুধবার সকালে ব্রেকফাস্টের পাশাপাশি প্রতিদিন তিন বেলা করে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় আন্দোলনরত পড়ুয়াদের তরফে।
আন্দোলনরত বহিষ্কৃত ছাত্রী রুপা চক্রবর্তী জানান, “বিগত তিনদিন ধরে উপাচার্য অভিযোগ করে চলেছেন যে, আমাদের আন্দোলনের জেরে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা খাবার পাচ্ছেন না। আমরা এমনটা চাই না। আমরা মানবিক। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা তিন বেলা যা খাব, ওঁনাকে এবং ওঁনার পরিবারের বাকি সদস্যদের একই খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। যাতে উনি অভুক্ত না থাকেন।”
অপর ছাত্র সোমনাথ সৌ বলেন, “আমরা চাই না আমাদের জন্য কেউ অভুক্ত থাক। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। তাই আজ সকালে আমরা তাঁর জন্যে বাড়িতে দুধ, পাউরুটি, কলা পৌঁছে দিয়েছি। যতদিন আন্দোলন চলবে আমরা প্রতিদিনই তিনবেলা করে খাবার ওঁনার ও পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্য পৌঁছে দেব। প্রয়োজনে সন্ধ্যার স্নাক্সও পৌঁছে দেব আমরা।”
তিনি বলেন, “আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিল তখন আমরা ৬০ জন সদস্য সেখানে থাকবেন বলে তালিকাভুক্ত করেছিলাম। আমাদের আশা ছিল এই ৬০ জনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীরা থাকবে। কিন্তু যেভাবে প্রতিদিন এই সংখ্যাটা বাড়ছে, তাতে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
এদিকে বুধবার ই-মেল করে “মুক্তি চেয়ে” আচার্যকে চিঠি লিখলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। পুরো ঘটনা জানিয়ে অবিলম্বে তাকে ঘেরাও থেকে মুক্তি করবার আবেদন জানিয়েছেন উপাচার্য।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি ইমেল করে বিস্তারিতভাবে ছাত্র আন্দোলনের কারণ এবং গতিপ্রকৃতি তুলে ধরেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাকে অবিলম্বে ঘেরাও মুক্ত করবার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন ছাত্র বহিষ্কার করা হল এবং তার পরে কিভাবে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে, কারা সেই আন্দোলনকে সমর্থন করছে, সবই ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে।”
ছাত্র বিক্ষোভের জেরে তিনি গৃহবন্দি এবং তিনি ও তার পরিবার প্রয়োজনীয় খাবার ও পানীয় জল পাচ্ছে না বলেও বিগত তিনদিন ধরে অভিযোগ করেছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
তবে ওই চিঠিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উপাচার্য। সেই সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে রাজ্য সরকারের পুলিশ ও বিশ্বভারতীতে নিযুক্ত বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ঠিকমতো পালন করে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার হোক।