পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ চার দিন কম এক মাস পেরিয়েছে। করমণ্ডল দুর্ঘটনার পর বাহানাগা বাজার স্টেশনের রেললাইন ও ফিরেছে স্বাভাবিক ছন্দে। গঙ্গার বুক চিরে বয়ে গেছে গ্যালন-গ্যালন জল। সরকার প্রভাবিত সংবাদমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর আর প্রবাসী ভারতীয়দের ‘মোদি মোদি’ স্লোগান শোনাতে শোনাতে ভুলিয়ে দিয়েছে করমণ্ডলে স্বজন হারানো মানুষদের কান্না।
এখনও ভুবনেশ্বর এইমস-র মর্গে শুয়ে আছে ৮১ জনের মৃতদেহ। তাদের বাড়ি ফেরা হয়নি। হয়নি সৎকার।
গত ২৫ দিন ধরে ভুবনেশ্বের এইমস-র কাছে একটি গেস্ট হাউসে ধর্ণা দিয়ে বসে আছেন বিহারের বেগুসরাইয়ের বাসন্তী দেবী। ৫ সন্তানের মা বাসন্তী দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর মৃহদেহ পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন। স্বামী যোগেন্দ্র পাসওয়ান বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন। এখন তিনি নেই। এসব কথা বলতে বলতে এখনও চোখের জলে ভিজছে বাসন্তী দেবীর দুই গাল। রেলের আধিকারিকরা বলছেন, আরও ৫ দিন পর ফিরিয়ে দেওয়া হবে তার স্বামীর দেহ। কেউ বা বলছে, আরও বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু কবে স্বামীর পচাগলা লাশ সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পরবেন বাসন্তী আর তার সন্তানরা, তা কেউই জানে না।
একই অবস্থা পুর্নিয়ার বৃদ্ধ নারায়ণ ঋষিদেবের। গত ৪ জুন থেকে তিনি মর্গের দিকে তাকিয়ে। মাধ্যমিক পাশ করার পর তাঁর নাতি সুরজ কুমার কাজের খোঁজে চেন্নাই যাচ্ছিল। প্রাণ কেড়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সুরজের বৃদ্ধ দাদু ডিএনএ-র নমুনা দিয়ে বসে আছেন। কিন্তু এখনও ডিএনএ-রিপোর্টের ফল হাতে পাননি। কবে পাবেন, তাও জানেন না।
কোচবিহারের শিবকান্ত রায়ের পুত্র বিপুল তাঁর বিয়ের জন্য তিরুপতি থেকে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনার পর তাঁর দেহ রাখা ছিল কেআইএমএস হাসপাতালে। আর তিনি পুত্রের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন বালাসোরের হাসপাতালের বাইরে। অনেক দিন পর শোকাতুর বাবাকে জানানো হয় তার পুত্রের দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে বিহারের একটি পরিবারের হাতে। যতক্ষণে শিবকান্ত রায়কে এসব কথা জানানো হয়েছে, ততক্ষণে তাঁর ছেলের চিতা পুড়ে ভস্ম। মুজফফরপুরের রাজকলি দেবীও বসে আছেন, স্বামীর মৃতদেহের অপেক্ষায়।
হাসপাতালের কাছে গেস্ট হাউসে এখনও ৩৫ জন অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনদের মৃতদেহ ফিরে পাওয়ার আশায়।
রেল বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউ কিছু জানাতে পারছে না। একে অপরের ঘাড়ে দোষারোপ করছে। অসহায়ের মত মর্গের পানে তাকিয়ে এতগুলো পরিবার। কবে তারা প্রিয়জনদের দেহ নিয়ে ফিরবেন, সেকথা কেউ জানে না।