আহমদ আবদুল্লাহ: ভোপাল মধ্যপ্রদেশের রাজধানী। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত ভোপাল শাসন করতেন নবাব ও বেগমরা। সেই ভোপালে এসে বিজেপি নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুঝিয়ে দিলেন, ভোট এসে গেছে। আর বিজেপি সব সময় ভোটের আগে ইস্যু তৈরি করে। কখনও রামমন্দির কখনও বালাকোট, কখনও বা পুলওয়ামায় জওয়ানদের আত্মবলিদানের কথা ইস্যু হয়ে ওঠে।
মঙ্গলবার ভোপালে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি পরিষ্কার করে দিলেন, এবার নির্বাচনে তাঁদের ইস্যু কী হবে। সামনে রয়েছে ২৪-এর নির্বাচন এবং মধ্যপ্রদেশে ও আরও কয়েকটি রাজ্যের প্রাদেশিক ভোট। মোদি আমেরিকায় সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন। উত্তরে তিনি শুধু বলেছেন, ভারতের প্রত্যেকটি ধমনিতে রয়েছে গণতন্ত্র আর গণতন্ত্র। এই উত্তরে প্রশ্নকারী ও অন্যরা সন্তুষ্ট হল কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ভাবছেন।
ভোপালে মোদিজি বিজেপির কর্মীদের কাছে ভাষণ রাখেন। প্রোগ্রামটি ছিল ‘মেরা বুথ, সবসে মজবুত’। অর্থাৎ ভোট-কেন্দ্রিক প্রোগ্রাম। এতে মোদি সবথেকে বেশি কথা খরচ করেছেন ভারতের মুসলিমদের নিয়ে। তাঁর বক্তব্য ছিল, মুসলিম মেয়েরা তাঁর ডটার অর্থাৎ কন্যা। তিনি বলেন, এই কন্যারা তাঁর সঙ্গেই নাকি রয়েছেন।
প্রশ্ন হল, যদি কন্যারা থাকে, তাহলে পুত্ররা কেন নেই? মুসলিম ছেলেদেরও তিনি পুত্র করে নিলেই তো পারেন, তাহলে তো তারাও মোদিজির সঙ্গেই থাকবে। আর ভারতে ২০২৩ সালে প্রজেকটেড মুসলিম জনসংখ্যা হচ্ছে কম করে ২২ কোটি। এদের ভোট মোদিজির সঙ্গে থাকলে তো ২০২৪ বেশ সহজ হয়ে যেত! সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, এই মোদিজির মুসলিম কন্যাবৃন্দ তারা তাঁর সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও কেন দেশে অসংখ্য বিলকিস বানুদের দেখা যায়? কেন বিলকিস বানুদের পরিবারের হত্যা ও ধর্ষণকারীদের সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হয়? কেন নারোদা পাটিয়াতে মুসলিম কন্যাদের-সহ শিশু-নারী সবাইকে হত্যা করে কুয়োতে ফেলা হয়? কেন মায়া কোদনানিরা সহিংসতা ও খুনে দোষী সাব্যস্ত হয়েও মুক্তি পেয়ে যান? কেন বাবু বজরঙ্গিরা কোনও সন্তানসম্ভবা মোদিজির কন্যার তলোয়ার দিয়ে পেট চিরে ভ্রূণকে আগুনে নিক্ষেপ করার পরও মর্যাদার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়? কেন এহসান জাফরির স্ত্রীকে
বিধবা এবং মেয়েকে এতিম হতে হয়? তারাও তো মোদিজির প্রিয় মুসলিম কন্যা। হয়তো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এসব কথা মোদিজি ভুলে গেছেন? ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ মোদিজির আর একটি নির্বাচনী স্লোগান। অথচ কাশ্মীরে আমাদের সেনাবাহিনী মসজিদে ঢুকে মুয়াজ্জিনকে আযানের সময় মাইকে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে বাধ্য করে। প্রতি সপ্তাহে গরু রক্ষাকারী নামে ‘খুনি বাহিনী’ মুসলিম যুবকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। মোদিজির কত কন্যা বিধবা হয়, মোদিজির কন্যারা ভ্রাতৃহারা হয়। পিতা নিহত হওয়ায় এতিম বা অনাথ হয়। কী জানি, তাঁর এই কন্যাদের জন্য কেন মোদিজির কষ্ট হয় না?
মোদিজি ভোপালে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি আইন করবেন। খুব পরিষ্কার, লোকসভা ভোটের আগেই মোদিজির এটাই হবে তুরুপের তাস।