পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ। বিশ্বাস করতেন ভারত জাত ধর্মের ঊর্ধে। দেশের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামোতে বিশ্বাসী ছিলেন। একজন ধার্মিক ব্যক্তি হয়েও মনেপ্রাণে ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ’, দেশের জন্য নেতাজির অবদানের কথা স্মরণ করে এইভাবেই বক্তব্য রাখলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
শনিবার নয়া দিল্লিতে অ্যাসোচেম দ্বারা আয়োজিত হয় ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্মারক বক্তৃতা ২০২৩’। সেই অনুষ্ঠানেই ভাষণ দিতে গিয়ে অজিত দোভাল বলেন, নেতাজি থাকলে ভারত ভাগ হত না। গান্ধিজিকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর। কোনওদিন স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভিক্ষা চাননি।
দোভাল বলেন, মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। জিন্নাহ সেই সময় বলেছিলেন, তিনি মাত্র একজনকেই নেতা হিসেবে মেনে নিতে পেরেছিলেন, আর তিনি হলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। তবে ইতিহাস তাঁর প্রতি নির্দয় ব্যবহার করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলছেন।
অজিত দোভাল বলেন, ভারত চিনের সঙ্গে যুদ্ধে ১৯৬২ সালে পরাজিত হয়েছিল, কারণ দেশ সেই সময় প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে উন্নত ছিল না। ১৯৫০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী ভেনে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা ছিল, কারণ ওই সময় আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। আমরা যদি আমাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারতাম, তাহলে ১৯৬২ সালে পরাজয় ঘটত না। সেই সময় আমাদের কাছে যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম, সৈন্যের অভাব ছিল। সম্ভবত আমাদের পরিকল্পনাও সঠিক ছিল না। দোভাল বলেন, ভারতের কাছে সব কিছু ছিল কিন্তু ছিল না শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আর এই কারণেই অনুপ্রবেশকারীদের হামলার প্রতিরোধ করতে পারেনি দেশ। হান্স, মঙ্গোল, মুঘলরা এক এক করে আমাদের দেশে আক্রমণ চালিয়েছে। যদি দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হয়, তখন আপনাকে তাসের ঘরের মতো কাঁপতে হবে।
স্বাধীনতা আন্দোলনে সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদানের কথা স্মরণ করে ডোভাল বলেন, ‘নেতাজি, মহাত্মা গান্ধিকে শ্রদ্ধা করে প্রথমে তাঁর দেখানো পথে গিয়েছিলেন। এক সময় তাঁকে জেলে যেতে হয় এবং আটক অবস্থায় তিনি ভারত থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। আফগানদের পোশাক পরা একজন বাঙালির পক্ষে কঠিন হলেও সেই ছদ্মবেশে তিনি কাবুলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর তিনি রাশিয়া, জার্মানিতে চলে যান যেখানে তিনি অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তার নীতির সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলেও হিটলারের দ্বারা জার্মানির জেলে বন্দি ৪০০০ ভারতীয়কে মুক্তি দিয়েছিলেন। এর পর নেতাজি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গঠন করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির অবদানের কথা ভোলার নয়।