পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই বিয়ে হয়েছিল কানিজ ফাতিমার। তারপর স্বামী, এক পুত্রসন্তান ও সংসারেই আবদ্ধ ছিল তাঁর জীবন। স্বামী বিধায়ক ছিলেন বলে এলাকার মানুষজন আসতেন তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে। সেই সময় ফাতিমাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে শুনতেন এলাকার মেয়েদের সমস্যার কথা। নানা রকম সামাজিক কাজকর্মও করতেন। তবে রাজনীতি— নৈব নৈব চ! নির্বাচনী প্রচার, ভোটের ময়দান, ব্যালট বাক্স— এসবের কথা কোনও স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন, কোনওটাতেই ভাবেননি কানিজ ফাতিমা। কিন্তু শেষে তাঁর স্বামী কামারুল ইসলামের মৃত্যুর পর দলের জোরাজুরিতেই রাজনীতির ময়দানে আসেন ফাতিমা।
তাঁর স্বামী কামারুল ইসলাম দু’বারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও ৩০ বছর ধরে বিধায়ক ছিলেন। কামারুলের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকেই যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করেছিল কংগ্রেস।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্রথমে রাজি না হলেও শেষপর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেন ফাতিমা। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। পর পর দু’বার উত্তর গুলবার্গ থেকে বিজয়ী হন ফাতিমা। ওই এলাকার ৬০ শতাংশ বাসিন্দা মুসলিম হলেও ফাতিমার মতে তিনি লিঙ্গায়েত, এসসি, এসটি সবার সমর্থন পেয়েছেন।
হিজাব পরে কর্নাটক বিধানসভায় ঢোকা এতটাও সহজ ছিল না। কারণ মুসলিম বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে ভোট-যুদ্ধে নেমেছিল বিজেপি। সেইসব বাধা কাটিয়ে বিজেপি, মিম ও জেডিএস-র ৮ জন মুসলিম প্রার্থীকে হারিয়ে কর্নাটকের একমাত্র মুসলিম মহিলা বিধায়ক হন কানিজ ফাতিমা। তবে শুধু বিধায়ক হলেই তো হবে না। রাখতে হবে প্রতিশ্রুতিও।
এই বিষয়ে ফাতিমা বলেন, তাঁর সামনে স্পষ্ট কতগুলি লক্ষ্য রয়েছে। প্রথমত, কর্নাটকের বিগত বিজেপি সরকার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করায় বেশ কিছু ছাত্রী পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। ওইসব ছাত্রীকে কলেজমুখী করতে চান ফাতিমা। এই বিষয়ে তিনি আলোচনা করেছেন তাঁর দলের সঙ্গে। তাঁর মতে, খুব শীঘ্রই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়া হবে কর্নাটকে। উল্লেখ্য, এর আগেও হিজাব আন্দোলন ও সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে সরব হন ফাতিমা।
দ্বিতীয়ত, ওবিসি মুসলিমদের ৪ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে চেয়েছিল বোম্মাই সরকার। কর্নাটকবাসী মুসলিমদের সেই অধিকার নতুন করে ফিরিয়ে দিতে চান ফাতিমা।
তৃতীয়ত, তাঁর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন স্বামী কামারুল ইসলাম। এলাকার মানুষের ঘরে পানযোগ্য জল পৌঁছে দেওয়ার যে স্বপ্ন তাঁর স্বামী দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন এখন তিনি পূর্ণ করতে চান।
চতুর্থত, এলাকার মেয়েরা, যারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নন, বাড়িতে বসে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চান— তাদেরকে দিয়ে কোনও কাজগুলি করানো যায়, সেই নিয়ে ভাবছেন ফাতিমা।
ফাতিমা বলেন, কর্নাটকে কংগ্রেসের জয় একটাই বার্তা দেয়, যে মানুষ উন্নয়ন ও শান্তি পছ¨ করে। মানুষ আশা করে, বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ভাববে নির্বাচিত সরকার। কানিজ ফাতিমা জানান, কংগ্রেস মানুষের আস্থা জয় করেছে। তাঁর বিশ্বাস, সেই আস্থা রক্ষা করবে কংগ্রেস।