পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: সব জানতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মেয়েদের শরীরে হাত দেন কুস্তি ফেডারেশনের কর্তা ব্রিজভূষণ, ২০২১ সালেই এই অভিযোগ শোনানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। এফআইআরে এমনই দাবি করেছেন এক মহিলা কুস্তিগির। তাঁর দাবি, নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছিলেন, অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখবে ক্রীড়া মন্ত্রক। কিন্তু তারপরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এতদিন কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রাণাধীন দিল্লি পুলিশের বক্তব্য ছিল, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ না থাকার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদে এবার ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি এফআইআরের কপি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরলেন সাক্ষী মালিকরা। সেখানে বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ উঠে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ৭ জন মহিলা মহিলা কুস্তিগিরের অভিযোগ মিলে মিশে যাচ্ছে। তাদের সকলের বিরুদ্ধে কম-বেশি একই ধরণের ‘অভব্যতা’ করতেন ব্রিজভূষণ বলে অভিযোগ।
২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের চাপে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ২টি এফআইআর দায়ের করা হয়। একটি দায়ের করেন ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা কুস্তিগির। অন্যটি দায়ের করেন এক নাবালিকার বাবা।
ঠিক কি কি অভিযোগ রয়েছে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে?
প্রথম জনের অভিযোগ: বারবার তাঁর গায়ে হাত দিতেন ব্রিজভুষণ। রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়ার নামে, তাঁর বুকে, পেটে হাত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকবার এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। হাঁটুতে হাত রাখা হয়। পায়ের উপর পা দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করা হয়। চুপ থাকার কারণেই ফায়দা তোলেন ব্রিজভূষণ।
দ্বিতীয় জনের অভিযোগ: নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দেখার নামে দ্বিতীয় মহিলা কুস্তিগিরের বুকে হাত দেন ব্রিজভূষণ। কোচ না থাকাকালীন কুস্তিগীরের জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেন অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ। ঘরে ডেকে জোর করে শারিরীক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
তৃতীয় জনের অভিযোগ: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়ার নাম করে, ওই কুস্তিগিরকে ডাকা হয়। এরপর ফোন দেওয়ার নাম করে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন ব্রিজভূষণ। বিপদের সময় দরকারি ওষুধ কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করা হয়।
চতুর্থ জনের অভিযোগ: নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দেখার নাম করে গায়ে হাত দেন ব্রিজভূষণ। কুস্তিগিরের বুক থেকে পেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দেন তিনি। বারবার রেস্তরাঁয় খেতে যেতে বলা হলেও ব্রিজভূষণের স্বভাব আঁচ করতে পেরে ওই কুস্তিগির তার সঙ্গে যাননি।
পঞ্চম জনের অভিযোগ: ছবি তোলার জন্য অনেকে একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই কুস্তিগির ছিলেন, লাইনের একেবারে শেষে। ইচ্ছে করেই তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ান ব্রিজভূষণ। তাঁর শরীরের পিছনের অংশে অশালীন ভাবে হাত রাখার চেষ্টা করতেই সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন ওই মহিলা কুস্তিগির। এরপর জোর করে তাঁর কাঁধ ধরে আটকে রাখেন ব্রিজভূষণ।
ষষ্ঠ জনের অভিযোগ: ছবি তোলার নামে কাছে টেনে বলপূর্বক কাঁধ ধরে রাখা হয় ওই কুস্তিগিরের। নিজেকে ছাড়াতে না পেরে, ব্রিজভূষণকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্রিজভূষণ হুঁশিয়ারি দেন- বেশি চালাকি করলে আগামী দিনে কোনও প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে না ওই কুস্তিগির।
সপ্তম জনের (নাবালিকা) অভিযোগ :
নাবালিকা কুস্তিগিরের পক্ষ থেকে তাঁর বাবার অভিযোগ- ছবি তোলার নাম করে নাবালিকার গায়ে হাত দেন ব্রিজভূষণ। নিজের দিকে টেনে, জোর করে কাঁধ-বুকে হাত দেওয়া হয়। নাবালিকার অনিচ্ছা সত্বেও শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য ইশারা-ইঙ্গিত করতেন কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং।
এতকিছুর পরও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে এতদিন অযোধ্যায় মহা র্যালির প্রস্তুতি করেছেন ব্রিজভূষণ। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করা হয়েছিল বলে, সাধু-সন্তদের মাধ্যেমে সরকারকে চাপ দিয়ে আইন পাল্টানোর হুঁশিয়ারি দেন ব্রিজভূষণ। কারোরই বুঝতে বাকি নেই যে শুধুমাত্র বিজেপি সাংসদ বলেই এখনও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
অন্যদিকে, শতমুখে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ এর স্লোগান দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ মহিলা কুস্তিগীরের মুখ থেকে ২০২১ সালে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ওঠা নক্ক্যারজনক অভিযোগ শোনার পরও কোনও ব্যবস্থা নেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।