পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: মুঘল ও সুলতানদের ইতিহাস গেরুয়ায় শিবিরের নাপসন্দ। ঐতিহাসিক মুসলিম নামে তাদের ভীষণ আপত্তি। ফলে মুসলিম নাম রয়েছে এমন বহু স্থানের নাম বাতিল হয়েছে নয়া ভারতে। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলের চেষ্টা নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছে গেরুয়া শিবির। হিন্দুত্ব ‘আঁকড়ে’ ধরে নিজের দলের বিদ্রোহীদের শেষ বারের মতো বার্তা দিতে চেষ্টা করেছিলেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে তিনি ঔরঙ্গাবাদের নাম ‘শম্ভাজিনগর’ এবং ওসমানাবাদের নাম ‘ধারাশিব’ রেখেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঔরঙ্গাবাদে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। দায়ের হয় মামলা। বুধবার এক জেলা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়ে যে, মামলাটি যেহেতু বম্বে হাইকোর্টে বিচারধীন তাই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতেই হবে। মহাবিকাশ আগাড়ি সরকার নাম বদলের এই সিদ্ধান্ত নিলেও কংগ্রেস সেদিন তা সমর্থন করেনি বলে জানা গিয়েছিল। রাজি ছিল না এনসিপিও। কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকতে হিন্দুত্ব আবেগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন উদ্ধব নিজে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। সিঁধ কেটে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছে বিজেপি।
২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা নিয়ে মামলা ঝুলে রয়েছে বম্বে হাইকোর্টে। ফলে জেলা অধিকারিকরা স্পষ্ট বলেছেন, আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত এখনই যেন কেউ নয়া নামের দাবি না জানায়। ঔরঙ্গাবাদ কালেক্টরেটের এক আধিকারিক জানান, ‘সরকারের অবস্থান, আদালতকে জানানো হয়েছে, তাই আদালতের রায় এবং পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হয়েছে।’ রাজ্য সরকারের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় অনুমোদন পাওয়ার পরে, মিম সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ঔরঙ্গাবাদ থেকে ‘ছত্রপতি ‘শম্ভাজিনগর’ নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানায় । সেই মালার রায় এখনো হয়নি।
দেশের ইতিহাসবিজড়িত জনপদের নাম ভারতীয় সংস্কৃতির কথা মনে রেখে পরিবর্তন করা হোক। সে জন্য গঠন করা হোক একটি নাম বদল কমিশন। এ আরজি জানিয়ে মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিচারপতি এম ভি নাগরত্ন আবেদনকারীকে সেদিন বলেছিলেন, ভারত এক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সুপ্রিম কোর্টও ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। এমন দেশে ধর্মান্ধতার আশ্রয় নিয়ে ঐতিহাসিক শহর, নগর, জনপদ বা রাস্তার নাম বদলের জন্য কমিশন গঠনের প্রশ্নই ওঠে না। আবেদনকারী বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেছিলেন, নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়কে নিশানা করে সারা দেশকে অগ্নিগর্ভ করে তুলবেন না। অতীত খুঁড়তে যাবেন না। এমন কিছু করবেন না, যা বৈষম্য সৃষ্টি করবে।