বিশেষ প্রতিবেদন: বর্তমানে মহিলারা সমস্ত ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ করছেন শুধু তাই নয়, সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের ক্ষেত্রে পরিচয় তুলে ধরছেন। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে মহিলারা। যেখানে দেশের রাষ্ট্রপতি একজন মহিলা সেখানে মহিলা রাজনীতিবিদের সংখ্যা এত কম কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বেঙ্গালুরুতে একটি রাজনৈতিক চিত্র ধরা পড়েছে, সেখানে বিগত ৬৬ বছরে মাত্র ৭ জন মহিলা বিধায়ক হয়েছেন। যেখানে মহিলারা সব ক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে, সেখানে সংসদে তারা সমান আসন পাবে না কেন, সেই নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেঙ্গালুরুতে বিগত ৬৬ বছরে ৭ জন মহিলা বিধায়ক হয়েছেন। প্রযুক্তি, শিক্ষা সমস্ত দিক দিয়ে বেঙ্গালুরু যেখানে উন্নত শহর বলে দাবি করে, সেখানকার মেয়েরা রাজনীতির দিক দিয়ে এত পিছিয়ে রয়েছে।
১৪ তম কর্নাটক বিধানসভায়, ২২৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ১০ জন মহিলা নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং একজনকে মনোনীত করা হয়েছিল। বলা যেতে পারে, এটি বিধানসভার মোট শক্তির মাত্র ৪ শতাংশ। কর্নাটক বিধানসভার এক-অষ্টমাংশ আসনের জন্য বেঙ্গালুরুতে রাজ্য নির্বাচনের ঠিক কাছাকাছি, রাজধানী শং৫ শতাংশও মহিলাও নির্বাচিত করতে পারেনি। বেঙ্গালুরু থেকে যে সাতজন মহিলা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন নাগারথনামা হিরেমাথ, লক্ষ্মীদেবী রামান্না, গ্রেস টাকার, প্রমিলা নেসারগি, এস হেমাবতী, শোভা করন্দলাজে এবং সৌম্য রেড্ডি। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৪টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখানে মহিলাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল মাত্র ৪ বার। ১৯৭৮, ১৯৯৪, ২০০৮, ও ২০১৮ সালে মহিলাদের নির্বাচিত করা হয়। এক্ষেত্রে মহিলারা অধিকাংশই ছোট দল বা ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
তবে এই অবস্থা শুধু কর্নাটকের নয়। সংরক্ষণ থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ খুবই কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, নাগাল্যান্ড ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো একজন মহিলাকে তার বিধানসভায় নির্বাচিত করেছিল। সেখানে ১৮৩ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলা ছিলেন মাত্র ৪ জন। ২০২১ সালে তামিলনাড়ু রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র পাঁচ শতাংশ মহিলা জিতেছিলেন।
রাজনীতিতে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারতন্ত্র একটি জায়গা ধরে রেখেছে। অনেক সময় রাজনীতিবিদদের কন্যা ও স্ত্রীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। যেমন বিজয়ওয়াড়া পশ্চিমের বিধায়ক জলিল খান, যিনি ২০১৯ সালে তাঁর জায়গায় তাঁর মেয়েকে প্রার্থী করেছিলেন।
এবার ২০২৩ সালে এই বিভেদ আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ কম। প্রশ্ন উঠেছে, কেন রাজনীতিতে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কম? মহিলারা কি রাজনীতিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী নয়? স্পষ্টতই, এটি পরিবর্তন হওয়া উচিত, কারণ মহিলা সংরক্ষণ বিলটি এখনও লোকসভায় মুলতুবি রয়েছে।
যেখানে আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি একজন মহিলা, সেখানে রাজনীতিতে মহিলারা অংশগ্রহণে এত দ্বিধা বোধ করছেন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তার অভাব অনেক মহিলাকে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করে থাকতে পারে। যখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্মান এবং নিরাপত্তা অনিশ্চিত থাকে, তখন এটা স্পষ্ট যে বেশিরভাগ পরিবারই চায় না যে, তাদের মেয়েরা রাজনৈতিক পেশা গ্রহণ করুক।
আশর্যজনকভাবে ২০২১ সালে এক কিশোর-কিশোরীদের অঙ্কন প্রতিযোগিতায় রাজনীতিবিদদের চিত্র আঁকতে বলা হয়েছিল। সেখানে তারা শুধু পুরুষ রাজনীতিবিদদের ছবি এঁকেছিলেন। তার মানেই বোঝা যাচ্ছে, ‘মহিলা রাজনীতিবিদ’ এই চিত্র তাদের চোখে ধরা পড়েনি। অথবা আজও কিশোর-কিশোরীরা বিশ্বাস করে, এই নির্দিষ্ট পেশাগুলি মহিলাদের জন্য নয়। এমনকি শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষিকা, নার্সিং, ফ্যাশন, রান্না- এই ধরনের পেশাগুলিতে মহিলাদের ছবি দেওয়া আছে। কর্মশালায় আরও দেখা গেছে যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা বিতর্ক অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদদেরকে ‘দুর্নীতিগ্রস্থ’ “কুচক্রী’, ‘নোংরা’, ‘স্বার্থপর’ ইত্যাদি বলে বর্ণনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাজনীতি একটি ভয়ঙ্কর পেশা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়াও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হিসেবে একটি পরিবার চায় না, তাদের বাড়ির মেয়েরা রাজনীতিকে পেশা হিসেবে বেছে নিক।
বর্তমান সময়ে রাজনীতির আঙিনায় মহিলাদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ মেয়েদের সমস্যাগুলি তারাই ভালোভাবে বুঝতে পারবে। কিন্তু তার জন্য সমাজ ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ শাসনে মহিলাদের সমান সুযোগ দিয়েছে কারণ মহিলারা ক্ষমতায় থাকলেই তাদের সমস্যাগুলো সত্যিকার অর্থে সমাধান করা হবে। এক্ষেত্রে বলা যায় একজন মহিলাকে শুধু বিকল্প হিসেবে নির্বাচিত না করে জনগণের কল্যাণে স্বাধীন ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত ক্ষমতাধারী হিসেবে নির্বাচিত করতে হবে।