বিশেষ প্রতিনিধি: প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফিরাউনরা (প্রাচীন মিশরীয় শাসক বা রাজাদের ফিরাউন বলা হত)। তাদেরকে কবর বা সমাধি দেওয়ার জন্যই পিরামিড নির্মাণ করা হত। মিশরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় হচ্ছে গিজা’র পিরামিড যা খুফু’র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত।
বহু সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন অন্যতম আলোচিত বিষয়, ‘পুরনো হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে এই গিজার পিরামিডের তলায়’। খননকার্যের সময় দেখা যায়, সেখানে একটি হিন্দু মন্দির রয়েছে। সেই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, পিরামিড তৈরি করা হয়েছে মন্দিরের উপরে। পিরামিডের নিচে হিন্দু মন্দিরগুলির অনেকগুলি দরজা রয়েছে এবং অনেকগুলি শিবলিঙ্গও রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘খননকালে মিশরের পিরামিডের নিচে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির পাওয়া গেছে। খননের পর পিরামিডের নিচে একটি হিন্দু সূর্য মন্দির পাওয়া গেছে।। আর পিরামিড তৈরি করা হয়েছে মন্দিরের উপরে। চার হাজার বছর আগে নির্মিত মিশরের পিরামিডের নীচে হিন্দু মন্দির খুঁজে পাওয়া আশ্চর্যের ব্যাপার। এভাবেই আমাদের সংষ্কৃতিকে ধবংস করে অন্যরা নিজেদের সাম্রাজ্য স্থাপনে ব্যস্ত ছিল। সনাতনের ধবংসের শুরু ৫০০০বছর আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।’
২০১৪ সালের ১৫ জুলাই ছবিটি ভাইরাল হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গিজার গ্রেট পিরামিডের ঠিক পূর্বে অবস্থিত একটি সমাধিতে ৪৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো একটি গুহাচিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। পিরামিড থেকে মাত্র হাজার ফুট (৩০০ মিটার) দূরে একজন ধর্মযাজকের সমাধিতে আবিষ্কৃত একটি চিত্রকলা প্রাচীনকালের জীবনের দৃশ্যগুলিকে চিত্রিত করেছে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইন্সটিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের একটি দলের ২০১২ সালে আবিষ্কৃত চিত্রকর্মটিতে জীবনে প্রাণের দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নীল নদীতে দক্ষিণে যাত্রা করা নৌকা, জলাভূমিতে পাখি শিকারের ভ্রমণ এবং পার্সেনেব নামের একজন ব্যক্তি তার স্ত্রী ও কুকুরের সঙ্গে রয়েছেন। বিজ্ঞানীরা পার্সেনেবের সমাধি খুঁজতে গিয়ে ‘ধর্মযাজক’ ও এক ‘পাচক’-এর গুহাচিত্র আবিষ্কার করেন।
তবে ১৯ শতক থেকে সমাধিগুলি থেকে নয়া অন্যতম বৈশিষ্ট্যযুক্ত কিছু আবিষ্কৃত হয়নি। সেখানে সেন্ট্রাল প্রেক্ষাগৃহে ওল্ড কিংডম পেন্টিং আবিষ্কার একটি অন্যতম ঘটনা। রাশিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটি ফর দ্য হিউম্যানিটিস-এর ফ্যাকাল্টি সদস্য মাকসিম লেবেদেভ লাইভ সায়েন্সকে (মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ইতিহাস কেন্দ্রিক ওয়েবসাইট) এই সমস্ত তথ্য জানিয়েছেন। মাকসিম লেবেদেভ-এর কথায় সমস্ত গুহাচিত্রের একটি প্রতীকী চিহ্ন রয়েছে। এই গুহাচিত্রে পাখি সহ, পূণর্জন্ম প্রভৃতিকে চিহ্নের আকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিশর সমাজের চাষ-আবাদ সহ ফসল ফলানোকে দেখানো হয়েছে। তবে খননকার্যের সময় সময় পাওয়া গুহাচিত্র হিন্দুর মন্দিরের সঙ্গে কোনও সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি বিভ্রান্তিকর। মিশরের শহর গিজাতে অবস্থিত দ্য গ্রেট পিরামিডের ঠিক পূর্বে অবস্থিত একটি সমাধি থেকে আবিষ্কৃত প্রায় ৪৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগের একটি দেয়ালচিত্রকে বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে।
ফক্স নিউজের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর গিজা পিরামিড থেকে হাজার কিলোমিটার দুরে পার্সেনেবের সমাধি আবিষ্কৃত হয়। সেখানে এক বসার ঘর, সমাধি কক্ষ ও কেন্দ্রীয় কক্ষের হদিশ পাওয়া যায়। তিনটি কক্ষে ১১টি মূর্তি রয়েছে যাতে পার্সেনেব এবং তার পরিবারের সদস্যদের চিত্র রয়েছে। ১৯ শতকে প্রথম জার্মান অভিযাত্রী কার্ল রিচার্ড লেপসিয়াস এবং ফরাসি ইজিপ্টোলজিস্ট অগাস্ট মেরিয়েট দ্বারা নথিভুক্ত করা, সমাধিটি মধ্য বা শেষ পঞ্চম রাজবংশের (সাল ২৪৫০-২৩৫০খ্রিস্টপূর্ব) বলে মনে করা হয়।
পঞ্চম রাজবংশ হল ওল্ড কিংডমের মধ্যে একটি সময়কাল। প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসে, ওল্ড কিংডম (খিস্ট্রপূর্ব ২৬১৩-২১৮১) ‘পিরামিডের যুগ’ বা ‘পিরামিড নির্মাতাদের যুগ’ নামেও পরিচিত।
তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, ছবিটি ৪৩০০ বছরের পুরনো একটি দেয়ালচিত্র যা ২০১২ সালে মিশরের এক সমাধি খননের সময় আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে সেটি মিশরের পিরামিডের নীচে আবিষ্কৃত হিন্দু মন্দিরের ছবি ন