পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ভারতের মতো দেশে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় অন্যতম মাধ্যম হতে পারে মাইক্রোগ্রিন্সের উৎপাদন। এই ফসল পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সক্ষম বলে জানিয়েছে একদল গবেষক।
মাইক্রোগিন্স আসলে সবজি এবং ভেষজ উদ্ভিদের চারা। অঙ্কুরোদগম হওয়ার এক মাসের মধ্যে এই বীজটি বেড়ে ওঠে এবং ফসল তোলার উপযোগী হয়ে ওঠে। পুষ্টিতে ভরপুর এমন সুস্বাদু সবজি “সুপারফুড” হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। ছোট, সীমাবদ্ধ পরিবেশেও খুব সহজেই এমন উদ্ভিদ চাষ করা সম্ভব।
মানুষের খাদ্য তালিকায় সালাদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি উচ্চমূল্যের ফসল হলো মাইক্রোগ্রিন। এ ফসলগুলো ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর, উচ্চ পুষ্টি মূল্যসম্পন্ন এবং উৎপাদকদের জন্য আয়ের একটি ভালো উৎস। সাধারণত বীজ থেকে কটিলিডন (বীজপত্র) বা কটিলিডনসহ প্রথম পাতা বের হওয়া পর্যায়ের চারাটিকে মাইক্রোগ্রিন বলা হয়ে থাকে।
স্প্রাউটের সাথে মাইক্রোগিনের পার্থক্য হলো স্প্রাউটে মূলসহ সমস্ত অংশ ব্যবহার করা হয় আর মাইক্রোগ্রিনে মূল বাদে এর উপরের অংশটুকু ব্যবহার করা হয়।
এই নিয়ে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ইতিমধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। মহাকাশচারীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাইক্রোগ্রিনসকেই প্রাধান্য দিচ্ছে নাসা। সেই উদ্দেশ্যেই দীর্ঘদিন ধরে এই পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা।
শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ একাধিক দেশে বেশ কয়েক দশক ধরে সালাদের টপিং হিসেবে মাইক্রোগ্রিন্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি দেশের বড় বড় রেস্টুরেন্টের খাদ্য তালিকায়ও এর প্রচলনও ক্রমবর্ধমান বাড়ছে।
এই প্রসঙ্গে বিদ্যাধরন নামক এক মাইক্রোগ্রিন্স চাষি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লাল, সাদা ও গোলাপি মুলোর বৈচিত্র্য রয়েছে। সূর্যমুখী ফুল, মটরের অঙ্কুর, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, লাল অ্যামরান্থাসও আছে। আমরা এমন ১২ ধরনের মাইক্রোগ্রিনস চাষ করি।”
আমার নিজের গ্রিনহাউস ও বাসার বারান্দায় সে সব চাষ হয়। জায়গাটি সব মিলিয়েও দশ বর্গ মিটারের বেশি হবে না জানান তিনি। এই কাজে আমার স্ত্রী ও কন্যাও আমাকে সাহায্য করেন। বীজ বপন থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত সব কাজ পরিবারই সামলায়।
বিদ্যাধরন আরও বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, ছোট জায়গায় বিশাল পরিমাণ উৎপাদন সম্ভব। এক লক্ষ টাকারও কম টাকা প্রাথমিক ভাবে বিনিয়োগ করেছিলাম আমরা। সেই তুলনায় মুনাফা ভালোই হয়েছে। মাসে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়।”
উল্লেখ্য, ৫৬ বছর বয়সী বিদ্যাধরন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। জীবনের বেশিরভাগ সময় তার বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে কাটলেও।সবসময় চাষি হতে চেয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘কৃষি আমার আবেগের জায়গা। একসময়ে আমার একটা খামার ছিল, তবে সেটা লোকসানে চলতো।”
মোটা অংকের বিনিয়োগ ও চেন্নাইয়ের বাইরে খামার চালানোর খরচের কারণে তাকে চাষের কাজ ছেড়ে দিতে হয়। তা সত্ত্বেও নিজের স্বপ্ন ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। বিকল্প কৃষিপদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে তিনি মাইক্রোগ্রিন্স সম্পর্কে জানতে পারেন।
ভারতের কৃষিক্ষেত্র চাপের মুখে রয়েছে। ফলন কমছে, পানিসম্পদ লোপ পাচ্ছে এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অতীতে চাষের উদ্যোগের সময় বিদ্যাধরনেরও হাতেনাতে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্যদিকে মাইক্রোগ্রিন্সের চাষ একই সঙ্গে সহজ ও টেকসই।
মাইক্রোগ্রিন রোপন পদ্ধতি
ক) প্রথমে মাটি দিয়ে ট্রে ভর্তি করে নিন।
খ) গাছের বীজগুলো একটু সাজিয়ে বিছিয়ে দিন।
গ) এরপর স্প্রেয়ার দিয়ে আস্তে পানি ছিটিয়ে দিন।
ঘ) ট্রে রোদে রাখার প্রয়োজন নেই,ঘরের ভেতরেই রাখুন।
ঙ) যখন চারা গাছ জন্মাবে তখন ই কেবল রোদে ট্রে রাখবেন।
ভারতের রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে প্রায় সব জায়গায় মাইক্রোগ্রিন্স গজানো সম্ভব।একইসঙ্গে চাষিদের আয় বাড়াতে এবং বেড়ে চলা জনসংখ্যার পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হতে পারে এই উদ্ভিদ বলেও জানাচ্ছে গবেষকরা।