পুবের কলম প্রতিবেদকঃ শনিবার বিজেপি সাংসদ জন বার্লার সুরে সুর মিলিয়ে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই শাসক দল তৃণমূল সহ অন্যান্য অ-বিজেপি দলগুলি প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করে, অবশেষে বিজেপি ঝোলা থেকে বেড়াল বের করেই ফেলল। বিজেপি যে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে তা স্পষ্ট হল। যদিও দিলীপের এই বাংলা ভাগের দাবির প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করেছেন দলেরই অন্যান্য নেতারা। রাহুল সিনহা থেকে শুরু করে লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা রবিবার পালটা বলেছেন, বাংলা ভাগ হবে না। তাঁরা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে। যদিও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দিলীপ ঘোষের মতো দলের শীর্ষনেতা প্রকাশ্যে বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করায় বিজেপি যে বাংলা ভাগ করতে চায় তা প্রকট হয়েছে। বাংলা ভাগ নিয়ে বিজেপির মুখোশ খুলে গিয়েছে। বিজেপির এই অবস্থান নিয়ে রাজ্যজুড়ে যেভাবে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে তা দেখেই এখন মুখরক্ষার চেষ্টা করতে বিজেপির অন্যান্য নেতারা মুখে বাংলা ভাগের বিরোধিতার কথা বলছে।
উzত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করা নিয়ে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পর বিজেপির অন্দরে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চেহারা ফুটে উঠেছে। ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে গেরুয়া নেতা-নেত্রীদের গলায়। বিজেপির দুই নেতা রাহুল সিন্হা ও লকেট চট্টোপাধ্যায় ঘুরিয়ে দিলীপ ঘোষের বিরোধিতা করেছেন। শনিবার দিলীপ ঘোষ পৃথক উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের পক্ষে সওয়াল করে বলেছিলেন, এখন যদি উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল গঠনের দাবি ওঠে তবে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই। কারণ, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গে কোনও উন্নতি হয়নি। তাই পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি ওঠা অমূলক নয়। দিলীপের এই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পালটা সরব হলেন হুগলির সাংসদ তথা বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলা কখনও ভাগ হবে না।’একই মন্তব্য করেছেন আর এক বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাও। এ দিন তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। বাংলা ভাগ নিয়ে বিজেপি কোনও নীতি নেয়নি। এই নিয়ে কোনও জাতীয় নীতি নেই, রাজ্য নীতি নেই, পার্টিরও কোনও নীতি নেই।’
এমনিতেই বাংলা ভাগের দাবি নিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল। তারা নিজেদের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, কোনও মূল্যেই রাজ্যভাগ মেনে নেওয়া হবে না। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘ এটা বিজেপির দিশাহীন দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতি। বিধানসভা ভোটে হেরে ওদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস–সিপিএমও। প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য দিলীপ ঘোষের সমালোচনা করে বলেন, বিজেপির এই রাজ্যভাগের দাবি আসলে সংকীর্ণ আঞ্চলিকতাবাদের প্রতিচ্ছবি। দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। ওরা কলকাতায় এক কথা বলছে আর উত্তরবঙ্গে গিয়ে অন্য কথা বলছে। বিজেপি দলটির কোনও মতাদর্শ নেই। বাংলার মানুষ ওদের দাবিকে সমর্থন করবে না কখনও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, বাংলা ভাগ নিয়ে বিজেপির দাবি রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করবে। এটা বিজেপির চরম অসততা। কলকাতায় থাকলে বাংলা ভাগের বিরোধিতা আর উত্তরবঙ্গে গিয়ে রাজ্যভাগের পক্ষে সওয়াল করা…যখন যেমন তখন তেমন। বিজেপির কোনও রাজনৈতিক নীতিবোধ নেই।