বিশেষ প্রতিনিধি: করোনার আতঙ্ক বিদায় নিতেই ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে অ্যাডিনো ভাইরাস। কিন্তু এর পরেও নিস্তার নেই। ফের নয়া আতঙ্ক নিয়ে হাজির হংকং ফ্লু। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটার পর একটা নয়া ভাইরাসের হানায় ক্রমশই সেই পুরনো ভয় আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এইচ৩এন২ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের মধ্যে প্রথম মৃত্যু হল দুই রাজ্যে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক সূত্রে জানা গেছে, মৃতদের মধ্যে এক জন হরিয়ানার বাসিন্দা, অন্য জন কর্নাটকের। দেশে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন। এ ছাড়াও এইচ১এন১ ভাইরাসে ৮ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর। দেশে এখনও পর্যন্ত এইচ৩এন২ এবং এইচ১এন১ ভাইরাসই পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দু’টি ভাইরাসেরই উপসর্গ অনেকটা কোভিডের মতো।
উল্লেখ্য, হংকং ফ্লু প্রধানত মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে উত্তরপ্রদেশ ও কর্নাটকে। এই দুই রাজ্যে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপরূপ এইচ৩এন২-এ আক্রান্তের সংখ্যা। ফ্রেব্রুয়ারি মাস থেকেই হাঁচি, কাশি-সর্দি সহ জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জ্বর সারলেও কাশি, গলা খুসখুস থেকেই যাচ্ছে। হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর ভিড়। তবে ভয়ের কারণ হল এই ভাইরাসের ক্ষমতা অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় বহু মাত্রায় বেশি।
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস একজনের থেকে অপরজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ধরনের উপসর্গ থাকলে তাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘হংকং ফ্লু’।
দীর্ঘ দিন কাশি আর সেই সঙ্গে জ্বর, বিগত দু-তিন মাস জুড়ে এমন উপসর্গে ভুগছেন অধিকাংশ রোগী। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সম্প্রতি জানিয়েছে, এই উপসর্গগুলির জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এইচ৩এন২ উপরূপ। এই নয়া উপরূপের কারণেই রোগীরা সবচেয়ে বেশি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অন্য উপরূপগুলির তুলনায় এটি অনেক বেশি ক্ষতিকর, দাবি আইসিএমআর-এর।
এই হংকং ফ্লু-এর উপসর্গ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর, সেই সঙ্গে কাশি, নাক থেকে জল পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলাব্যথা ও মাথাযন্ত্রণার মতো উপসর্গ লক্ষ করা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া, বমি, সারা শরীরে যন্ত্রণা দেখা দিচ্ছে। অন্যান্য উপসর্গ ৩ দিনের মাথায় কমতে শুরু করলেও কাশির সমস্যা কমতে ১৫ দিনের বেশি সময় লাগছে। চিকিৎসকদের মতে, কোভিড পরবর্তী সময়ে শিশুদের ফ্লুয়ে আক্রান্তের হার প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাব কিভাবে
১) করোনার বিধিনিষেধের মতোই মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সহ ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তবে কোনও ক্ষেত্রে সাবান না থাকলে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে জীবাণু মুক্ত করতে হবে। হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া নয়, চোখ-মুখ বা নাকও স্পর্শ করাও যাবে না।
২) রাস্তাঘাটে বা ভিড়ের মধ্যে সংক্রামিত রোগীরা থাকতেই পারেন। কাজেই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। তাই এই ধরনের জায়গায় একান্ত প্রয়োজনে যেতে হলে, অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
৩) ফ্লু প্রতিরোধের জন্য শিশুদের এবং পূর্ণবয়স্কদের আলাদা দু’টি টিকা রয়েছে। প্রতি বছর সময় মতো সেই টিকাগুলি নেওয়া জরুরি। তবে ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার পর এই টিকা নিয়ে কোনও লাভ নেই, আগেই নিতে হবে।
প্রধানত দেখা যাচ্ছে, এই ফ্লু বেশি পরিমাণে শিশুদের হচ্ছে। বড়রা নানা রকম সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলেও ছোটদের এই সব নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করানো খুব কঠিন। তার উপর অপুষ্টিজনিত সমস্যা থাকলে এই রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করা আরও মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাই এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরই সন্তানদের খেয়াল রাখতে হবে। তাদের বুঝিয়ে স্কুলে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। সেই সঙ্গে পুষ্টিকর খাবারের দিকে জোর দিতে হবে।