দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: গুরুদেবের উপাসনা গৃহের সামনে সরকারি রাস্তায় তৃণমূলের রাখীবন্ধনের সম্প্রীতি যাত্রা। গুরুদেব বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রচলন করে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির প্রতীক রাখীবন্ধন উৎসব। বিজেপির বঙ্গ ভঙ্গ ও বাংলা বিরোধী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে তৃণমূল বেছে নিয়েছে এই দিনটিকেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আশ্রয় করে ” বাংলার মাটি, বাংলার জল…” গাইতে গাইতে বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহের সামনে সরকারি রাস্তার উপর দিয়ে শোভাযাত্রা করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা।
১৮ অগাস্ট কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বিশ্বভারতীর মধ্য বিজেপি-র দলীয় নেতৃত্বদের আগমন ও সরাসরি বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ নিয়ে কড়া সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে। এই ঘটনার জেরে আশ্রমিক ও ছাত্র ছাত্রীদের মধ্য ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। ওই দিন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তাঁর কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, এবার তৃণমূল বিশ্বভারতীতে ঢুকে দলীয় অনুষ্ঠান করবে।
সেই কথা মতো তৃণমূল সমর্থকেরা সকাল রাখী বন্ধন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে। দলীয় পাতাকা ফেস্টুন নিয়ে গুরুদেবের ব্রহ্ম উপাসনা গৃহের সামনে সেই যাত্রা করে। সেটার বিরুদ্ধেও একাংশ নিন্দার ঝড়ে তোলে। রবীন্দ্র পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, বিশ্বভারতী যে কোনও ধরনের রাজনৈতিকরণের বিরুদ্ধে। গুরুদেবের ক্যাম্পাস চত্বরের যে রাজনৈতিককরণ চলছে তা নিন্দনীয়। এর তীব্র প্রতিবাদ দরকার আছে। না হলে ভবিষ্যতে বিশ্বভারতীকে আর বাঁচানো যাবে না। রাজনৈতিক মেরুকরণের দড়ি টানাটানিতে রবীন্দ্র আর্দশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়ে। তবে যা হচ্ছে তার জন্য উপাচার্য দায়ী। পবিত্র বন্ধনের দিন তাঁর দেখানো পথে চলতে গিয়ে তার উপাসনা গৃহের সমানে রাজনৈতিক দলীয় পতাকা ফেস্টুন নিয়ে শোভা যাত্রা করা তৃণমূল কাছে শোভনীয় না।
অনুব্রত বলেন, তৃণমূল বিজেপির মতো অহেতুক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে না। কেন্দ্রের শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের মতো, ‘গায়ের রং কালো ছিল, তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কোলে নিতেন না পরিবারের অনেকেই’ এসব মন্তব্য বিজেপি করে। আমারা ‘বেঙ্গল’ এর লোক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জানি। ওদের মতো উড়ে এসে জুড়ে বসিনি।
অন্যদিকে, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রীতির রাখীবন্ধন অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাখী হোক সম্প্রীতির, রাখীবন্ধন হোক ঐক্যতার, এই রাখী বাঁধুক মোদের মানুষত্বের বন্ধনে। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হাওড়া জেলার ধুলাগরের দাঙ্গার সময় হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি রাখী বন্ধনের মাধ্যমে। সেই থেকে আমরা সম্প্রীতি রাখীবন্ধন অনুষ্ঠান বিভিন্ন জায়গায় পালন করে থাকি।”