পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিতর্ক অব্যাহত। বাংলাদেশ থেকে ৬৯ জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি নৌকা আন্দামান ও নিকোবরে পৌঁছেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নৌকায় ১৯ জন পুরুষ, ২২ জন মহিলা, ২৮ জন শিশুকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার পথে দিকে যাচ্ছিল নৌকাটি। কিন্তু পথে খারাপ আবহাওয়া ও জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে সোমবার রোহিঙ্গাভর্তি নৌকাটি আন্দামান নিকোবরে এসে পৌঁছায়। নৌকাটির নাম ‘মা বাবার দোয়া’। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় নিকোবরের মালাক্কা জেটিতে পৌঁছায় নৌকাটি। কর্মকর্তাদের আরও সংযোজন, এই ৬৯ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ত্রাণ শিবিরে ছিল, কিন্তু সেখান থেকে দু সপ্তাহ আগেই পালিয়ে যায় তারা।
স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, তাদের বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি মন্তব্য করা হচ্ছে। এক চিকিৎসা দলের প্রতিনিধিরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। ঘটনার পরেই উপকূলরক্ষী, পুলিশ এবং একটি বিপর্যয় মোকাবিলা দল জেটিতে যান। নিরাপত্তা কর্মীরা নৌকায় গিয়ে তাদের খাবার, জল, ওষুধ সরবরাহ করেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সীমাবদ্ধ উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে তরমুগলি দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ থেকে আসা ৬৬ জন রোহিঙ্গাভর্তি একটি নৌকাকে আটক করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনও স্থায়ী সমাধান এখনও হয়নি। দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার, ও আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত রোহিঙ্গাদের নিজের মধ্যে বেড়েছে চুরি থেকে সংঘর্ষের মতো ঘটনা। নিরাপত্তাহীনতা তাদের সঙ্গী।
রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে আসছে। এই সংকটের শুরুর দিকে বিভিন্ন দেশ এবং দাতা সংস্থাগুলি যেভাবে এগিয়ে আসছিল তারা এখন সেভাবে আর মনোযোগ দিচ্ছে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই সহায়তা আরও প্রকট হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ না আসার জন্য কিছু বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি কমিয়ে আনতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১৫০টি সংস্থা রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য নিয়ে কাজ করে আসছে।
রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত বছর এক বিবৃতিতে জানায়, এই বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মায়ানমার আর বাংলাদেশের মধ্যে আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে অন্তত ১৯০০ জনের বেশি অবৈধভাবে সীমান্ত পার করেছে, যে সংখ্যাটি ২০২০ সালের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ছয় বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনও উন্নতি হয়নি। এর ফলে তারা আর কোনওদিন মায়ানমারে পৌঁছতে পারবে কিনা তা এখনও প্রশ্নের মুখে।