পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার অতি শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। তুরস্ক ও সিরিয়ায় সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে।
আহত ২০ হাজারের কাছাকাছি। তীব্র শীত ও বৃষ্টিপাতের কারণে দুর্গম এলাকাগুলিতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। দুই দেশেই প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাসস্থান হারিয়ে অনেক মানুষই খোলা আকাশের নিচে চোখের পানি ফেলছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ সব হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের আবেদনে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে ৪৫টি দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক দেশই তাদের উদ্ধারকারী দল ও বিশেষজ্ঞ দলকে তুরস্কে পাঠিয়েছে। এই দলগুলি তুরস্কের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরি উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও বহু ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ বাকি। তাই আরও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকছে। সোমবার ও মঙ্গলবার তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশকিছু ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত শিশু, নারী ও পুরুষকে বের করে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কংক্রিটের চাঙড় সরাতেই বেরিয়ে এসেছে রক্তমাখা লাশ। ভূমিকম্পে তুরস্কের ৭টি প্রদেশের অন্তত ১০টি শহর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরগুলো হল গাজিয়ানটেপ, কাহরামানমারাস, হাতে, ওসমানিয়া, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। তুরস্কে ধসে পড়েছে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি ভবন।
এ ছাড়া সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা এবং লাকাতিয়া শহরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ‘তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে ১৪ লক্ষ শিশুসহ ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
হু-র শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং বলেন, ‘যেসব অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, তার মানচিত্র দেখে বলা যায় যে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেনেভায় হু-র নির্বাহী কমিটিকে মার্শাং বলেছেন, ‘সিরিয়ায় বিভিন্ন জরুরি পণ্যের অভাব দেখা দেবে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানায়, ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্কে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত আফটারশক হতে পারে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম ঘেব্রিয়াসুস বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়ানোর মতো। আমরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে জরুরিভাবে সহায়তা পাঠাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা জরুরি ত্রাণ সংগ্রহ করছি। তাছাড়া আহত ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ব্যক্তিদের সহায়তায় জরুরি মেডিকেল টিম পাঠিয়েছি।’
উল্লেখ্য, এই ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই ৪ হাজার ৫০০ জন নিহত হয়েছে। আর সিরিয়ায় নিহত অন্তত ২ হাজার।