পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নিউমোনিয়ায় ভুগছিল তিন মাসের শিশু। মা চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও আত্মীয়রা তাকে মহিলা তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার নিদান দেন। সেই মতো নিজের শিশুসন্তানকে মা ছোটেন মহিলা তান্ত্রিকের কাছে। নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় মহিলা তান্ত্রিক নিদান দেন ৫১ বার গরম লোহার রডের ছ্যাঁকা। সেইমতোই একরত্তির ওপর চলে এই অমানুষিক অত্যাচার। চিকিৎসার নেশায় বুঁদ তান্ত্রিক তখন মায়ের বারণ শুনতেও নারাজ। এমন অবস্থায় ক্রমশই নেতিয়ে পড়ে শিশুটি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীনই মৃত্যু হয় একরত্তির। অমানুষিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের শাহদোলে।
বেশ কয়েকদিন ধরেই নিউমোনিয়ায় ভুগছিল শিশুকন্যাটি। পরিবারের লোকজন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু, তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তার মা রোশনী কোল মেয়েকে শাহদোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ির লোকজন বলেন তাকে মহিলা তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যেতে। আত্মীয়-পরিবার পরিজনের কথা ফেলতে পারেননি শিশুকন্যার মা। বাড়ির লোকজনের কথায় মহিলা তান্ত্রিকের কাছে শিশুকন্যাকে নিয়ে যান মা। মহিলা তান্ত্রিকের যেতেই মা রোশনী কোলের কাছ থেকে নিয়ে চলে তার তন্ত্র মন্ত্র। তান্ত্রিক এর পরেই নির্দেশ দেন গরম লোহার রড দিয়ে ছ্যাঁকা দিলেই সুস্থ হয়ে উঠবে একরত্তি।
মায়ের চোখের সামনেই ঘটতে থাকে এই নিদারুণ অমানবিক নির্যাতন। মায়ের কাতর আর্জিও তান্ত্রিকের কানে পৌঁছায়নি। একটি লোহার রড গরম করে ছ্যাঁকা দিতে থাকেন ৩ মাসের মেয়েটিকে। মেয়েটি যন্ত্রণায় আর্তনাদ করতে থাকে। সেই সময়ও পরিবারের লোকজন রোশনী কোলকে বুঝিয়েছিলেন, এটাই চিকিৎসার একমাত্র উপায়। এই অত্যাচার চলার মধ্যেই শিশুটি নেতিয়ে পড়েছিল। এরপর আর কারোর কথা না শুনে সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যান রোশনী কোল। কিন্তু, শাহদোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় ছোট্ট শিশুটির।
সন্তানের মৃত্যুর পর, স্থানীয় থানায় গিয়ে ওই মহিলা তান্ত্রিক এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের রোশনী কোলে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মহিলা তান্ত্রিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করেছে শাহদোল থানার পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকেই ওই মহিলা তান্ত্রিক পলাতক। তার সন্ধান চলছে। পুলিশ জানিয়েছে দ্রুত তাকে পাকরাও করা হবে।