পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: উপত্যকার আপেলের বাগানে কান না পাতলেও এখনও মাঝেমাঝে ভেসে ভেসে আসে এ কে ফর্টি সেভেনের নির্দয় ফায়ারিং-এর শব্দ। যখন-তখন রক্তের দাগ লাগে হিমালয়ের দুধ সাদা আঁচলে। কারণ এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি জম্মু কাশ্মীর। প্রথমে ৩৭০ ধারার বিলোপ, তারপর কোভিড মহামারী বিধ্বস্ত করেছে জম্মু-কাশ্মীরের জনজীবন। সেই অশান্তির ফল ভোগ করতে হয়েছে সেখানকার পড়ুয়াদেরও। তার উপর রয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক সময়ের ইন্টারনেট বন্ধের রেকর্ড। কিন্তু এই সব পাথুরে অভিজ্ঞতাকে পিছনে ফেলে রেকর্ড গড়ল ওয়ানি পরিবারের তিন ভাইবোন। সামান্য দিন মজুরের সন্তান হয়েও জম্মু-কাশ্মীরের ডোডা জেলার প্রত্যন্ত কাহারা এলাকার ইফরা আঞ্জুম ওয়ানি, হুমা ওয়ানি ও সুহেইল আহমদ ওয়ানি জম্মু-কাশ্মীর সিভিল সার্ভিস এক্সামিনেশন পাশ করলেন।
তিন ভাই-বোনের এই সাফল্যে বেজায় খুশি বাবা মুনির আহমদ ওয়ানি সহ পরিবারের অন্যান্যরা। তাঁদের বাবা মুনির দিন-মজুরের কাজ করেন। তাঁর মাসিক আয়১৫-২০ হাজার টাকা। তিন সন্তানের জন্য তিন জোড়া বই কেনার ক্ষমতাও ছিল না মুনিরের। প্রতিটা বিষয়ের একটি করে বই কিনে ভাগাভাগি করে পড়তেন ইফরা,হুমা আর সুহেইল। তিন সন্তানকে মোবাইল কিনে দেওয়ার মত পরিস্থিতিও ছিল না তাঁদের বাবার। কিন্তু সংসারের অনটন বা গুলি-বারুদের শিরোনাম কোনোটাই দমিয়ে রাখতে পারেনি ওয়ানি পরিবারের তিন সন্তানকে।
একই পরিবারের তিনজন সিভিল সার্ভিস পাশ করেছেন, এমন ঘটনাও এর আগে ঘটেনি উপত্যকার মাটিতে। রেকর্ড ভাঙার পর সুহেইল জানিয়েছেন, তিনি পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিতে চান। উপত্যকার মাটিতে অবৈধ ড্রাগস কারবারি রোখাই হবে তাঁর মূল লক্ষ্য। ইফরা আর হুমা অ্যাডমিনিসট্রেশনের কাজে যোগ দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের প্রান্তিক মানুষজনের জন্য কাজ করতে চান। ওই পরীক্ষায় সুহেইল, হুমা ও ইফরার র্যাঙ্ক যথাক্রমে ১১১, ১১৭ ও ১৪৩। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে ওয়ানি ভাই-বোনদের এই সাফল্য পথ দেখাচ্ছে নতুন প্রজন্মকে। তাঁদের ইচ্ছা শক্তির জয়ে এখন উৎসবের আবহ ওয়ানি পরিবারে।