পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : বিশিষ্ট মুসলিমদের সঙ্গে আরএসএস নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক ফের নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কয়েক মাস আগেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত কিছু বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক সারেন। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বলে পরিচিত আরএসএস-এর কয়েকজন নেতার সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিদের দ্বিতীয়বারের এই গোপন বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
সূত্রের খবর, এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় দিল্লির প্রাক্তন উপ রাজ্যপাল নাজিব জংয়ের বাসভবনে। আরএসএস-এর তরফে এই বৈঠকের প্রতিনিধিত্ব করেন ইন্দ্রেশ কুমার, রাম লাল, কৃষ্ণ কুমার গোপাল। ছিলেন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি, সাংবাদিক তথা রাজনৈতিক নেতা সাহিদ সিদ্দিকী, হোটেল মালিক সাইদ শেরওয়ানি। আরএসএস-এর নেতাদের বক্তব্য, বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ কর্তৃপক্ষ থেকেই নির্দেশ দেওয়া আছে।
জেআইএইচ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল মালিক মোহতাসিম খান বলেছেন, এই বৈঠকে বিশিষ্ট মুসলিম নেতারা উপস্থিত ছিলেন, তাই একে আর রুদ্ধদ্বার বৈঠক বলা যায় না। মোহতাসিম খান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বৈঠকে মুসলিম প্রতিনিধিরা বর্তমান ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কিছু বক্তব্য এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সয়ং সেবক সংঘের নির্দেশেই যেহেতু বিজেপি পরিচালিত হয় তাই গেরুয়া শিবিরকে বক্তব্য সম্পর্কে সতর্ক করার কথাও বলা হয়েছে। মুসলিম প্রতিনিধিরা পিটিয়ে খুন, বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা, অপ্রয়োজনীয় আটক ও বুলডোজারের রাজনীতি বন্ধ, ভূমি উচ্ছেদ সমস্যার সমাধান, গণহত্যার আহ্বানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের অবসান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহ শিক্ষাগত মান নিয়ে একাধিক আলোচনা সেরেছেন।
খান তার বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন, আরএসএস-এর নেতারা অনেক কিছু নিয়ে সহমত পোষণ করেছেন। যেমন ঘৃণার পরিবেশের অবসান ঘটাতে তারা বলেছেন, তারা ঘৃণার বিরুদ্ধে। মুসলিম নেতাদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে তারাও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে।
আরএসএস-এর নেতারা মুসলিমদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে টেনে গরু এবং তালাক সম্পর্কিত বিষয়গুলিও উত্থাপন করেছিলেন। মুসলিম প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন। মথুরা ও কাশীর মসজিদের বিষয় বৈঠকে উত্থাপন করা হয়েছিল। এই বিষয়ে মুসলিম নেতারা জানান, মসজিদের এই বিষয়টি আইনের বিচারাধীন।
তবে এই বৈঠকের তীব্র নিন্দা করে সরব হয়েছেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোন্যাল ল বোর্ডের সদস্যা ডা. আসমা তৈইবা জাহুর। আসমা বলেছেন, নিজেদের সংগঠনকে বাঁচানোর জন্য আরএসএস এই ধরনের অভিযান শুরু করেছে। এই ধরনের বৈঠকগুলি মুসলিম সম্প্রদায়কে আরও গুলামির দিকে ঠেলে দেবে।
গত বছর ২২ আগস্ট আরএসএস-এর সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ছিলেন দিল্লির প্রাক্তন উপরাজ্যপাল জমিরুদ্দিন শাহ। এই বছর আরএসএস-এর দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। ছিলেন জামিয়াত উলেমা-ই হিন্দ, জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ, দেওবন্দ ও আজমীর দরগার প্রতিনিধিরা। জামাতের হয়ে উপস্থিত ছিলেন মালিক মোহতাসিম খান, জমিয়তের হয়ে নিয়াজ ফারুকি ও ফজলুর রহমান।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আরএসএস-এর এই ধরনের বৈঠকের পিছনে অনুচ্চারিত কারণ অবশ্যই সংঘের নীতি ও আদর্শের প্রচার এবং তা সর্বজনীন করে তোলা। সংঘের আদর্শের রাজনীতিকরণের দায়িত্ব যেহেতু বিজেপির, তাই এই ধরনের আগ্রহ, তাগিদের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একটা থাকেই। মোহন ভাগবতের এই মসজিদ-মাদ্রাসা পরিদর্শন, ইমামদের সঙ্গে কথা বলা, বিশিষ্টজনের মন বোঝার অন্তরালেও রাজনীতির একটা পরশ রয়েছে। বিজেপি-শাসিত সব রাজ্যে আজানের জন্য লাউড স্পিকার ব্যবহারে রাশ টানা হয়েছে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ইসলামের জন্মের সময় লাউড স্পিকার ছিল না। অতএব হিজাবের মতো সেটাও অপরিহার্য নয়। ২০২৪-এ জয়ের হ্যাটট্রিক করতে চান নরেন্দ্র মোদি। মুসলমানদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চাৎপদ ‘পশমন্দা’ শ্রেণির মন জেতার ‘ব্লু প্রিন্ট’ তাই তৈরি।