পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ‘ওআইসি’ , তুরস্ক সহ বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশ। তুরস্ক, পাকিস্তান, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে উগ্র ডানপন্থীদের দ্বারা পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন’ (ওআইসি) এর মহাসচিব হুসাইন ব্রাহিম ত্বহা। এদিন তিনি জানিয়েছেন, সুইডেনে চরম ডানপন্থী দলের সদস্যরা বারবার মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু এবং পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননা করছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অবমাননার মতো যারা এই কাজ বারংবার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান তিনি। শনিবার স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের বাইরে ডানপন্থী নেতা রাসমুস পালুদান পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগের নেতৃত্ব দেন। রাসমুস হলেন অতি-ডানপন্থী স্ট্রাম কার্স পার্টির নেতা। প্রকৃতপক্ষে, সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তুরস্কের সক্রিয়তার কারণে, স্টকহোমের ডানপন্থীরা এর বিরোধিতা করছে বলেও জানান তিনি ।
বাংলাদেশঃ সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে উগ্র ডানপন্থি কর্মীর দ্বারা পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাক স্বাধীনতার অন্তরালে সারা বিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। রবিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে এই নিন্দার কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসলাম শান্তি ও সহিষ্ণুতার ধর্ম। অশান্তি ইসলাম অনুমোদন দেয় না। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে কোনো পরিস্থিতিতে ধর্মের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং সম্মান করতে হবে। এ ছাড়া সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ বসবাসের লক্ষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অযৌক্তিক উসকানি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানঃপাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের ঘটনা শুধু ইসলাম না মানব জাতির জন্য লজ্জার। বাক স্বাধীনতার আড়ালে এই রকমের কাণ্ডজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড বিশ্বের সমস্ত মুসলিমের ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে আঘাত করেছে।’পাকিস্তান এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধ্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানানো হয়।
কুয়েতঃকুয়েত বিবৃতি জারি করে বলে, সুইডেনে ইসলাম বিরোধী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রতিবাদের নামে ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো একদম নিকৃষ্টমানের ঘটনা। অভিযুক্ত এই রকম ঘটনা বারংবার ঘটিয়ে চলছে। তবুও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সালেম আবদুল্লাহ আল জাবের এই ঘটনাকে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত হানার পাশাপাশি মারাত্মক উসকানির সৃষ্টি বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
সউদি আরবঃ সউদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রিয়াদ সংলাপ, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ প্রচারের আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে ঘৃণা ও চরমপন্থাকে সম্মতি দেয় না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশটি মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং নীতির বিপরীতে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নকারী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
কাতারঃমধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রটি বলেছে, পবিত্র কুরআন পোড়াতে সুইডেনের কর্তৃপক্ষ যে অনুমোদন দিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা। দেশটি ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানঃ কুরআন পোড়ানোকে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা আখ্যা দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, বাক স্বাধীনতায় সমর্থনের ভুয়া অজুহাতে ইউরোপের কিছু দেশ চরমপন্থি ও উগ্রবাদীদের ইসলামের পবিত্রতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর সুযোগ করে দেয়।
তুরস্কঃকুরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার ঘটনায় কড়া ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এই ইসলামবিদ্বেষী কাজের অনুমতি দেওয়া সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’’
উল্লেখ্য, সুইডেনের রাজধানীতে শনিবার (২১ জানুয়ারি) তুরস্কবিরোধী বিক্ষোভ করে উগ্র কট্টরপন্থি সমর্থকরা। বিক্ষোভে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মতো জঘন্য ঘটনা ঘটায় তারা। স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কোরআন পোড়ানোর কাজটি পরিচালনা করেন ড্যানিশ উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের নেতা রাসমুস পালুদান। শনিবার পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই তুরস্কের দূতাবাসের সামনে একটি লাইটার দিয়ে পবিত্র কুরআন শরিফে অগ্নিসংযোগ করে পালুদান। এদিন পালুদান বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়, তাহলে আপনাকে অন্য কোথাও থাকতে হবে।’