পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ধর্মান্তরণ ‘অত্যন্ত গুরুতর বিষয়’। তাকে রাজনটিতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। সোমবার এমনটাই জানায় সুপ্রিম কোর্ট। ধর্মান্তরণ বিরোধী আইন চালুর জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপ দাবি করে শীর্ষকোর্টে পিটিশন দায়ের হয়। সেই আবেদনের শুনানিতে সোমবার শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘ধর্মান্তরণের মতো গুরুতর বিষয়ে কখনও রাজনীতির রং লাগানো উচিত নয়।’
ধর্মান্তরণ রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। এই ছিল মামলার দাবি। সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সহায়তা চায় আদালত। এদিনের শুনানিতে বিচারপতি এমআর শাহ এবং সিটি রবিকুমারের বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানির কাছে জানতে চায়, জোর করে এবং ভয় বা লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তরণ রুখতে কেন্দ্র ঠিক কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টে বিজেপির আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়ের আবেদনেরও শুনানি ছিল এদিন। আবেদনে তিনি বলেছিলেন, জোর করে এবং লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তরণ রুখতে দেশের সব রাজ্যকে কড়া নির্দেশ দিক কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে সে নির্দেশ দিক। ধর্মান্তরণ-বিরোধী আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করে তামিলনাড়ু সরকারের আইনজীবী পি উইলসন সোমবার বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এমন মামলা করা হয়েছে।’
তখনই দুই বিচারপতির বেঞ্চ তাঁকে সতর্ক করে বলে, ‘ধর্মান্তরণের মতো গুরুতর বিষয়ে রাজনীতির রং লাগাবেন না।’ ধর্মান্তরণ বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে যারা, তাদের যুক্তি হল, দেশের সংবিধানে যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমানাধিকার এবং বৈষম্যহীনতার কথা বলা রয়েছে, সেখানে এই ধরনের আইন অসাংবিধানিক।
সুপ্রিম কোর্ট আগেই বলেছে চ্যারিটির লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তর করা যাবে না। গেরুয়া শিবির ‘চ্যারিটি’ এবং ‘লাভ জিহাদ’ শব্দের বহুল ব্যবহার করে আসলে দেশের দুই সংখ্যালগু সম্প্রদায় খ্রিস্টান ও মুসলিমদের চিহ্নিত করতে চেয়েছে। অনেকে বলেছেন একাজে তারা অনেকটাই সফল হয়েছে। আজকাল কম বেশি সব মিডিয়াতেই এই লাভ জিহাদ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা’ ভারতীয় জনসংঘ কিংবা অটল জমানাতেও সংখ্যালঘুরা এমন অস্ত্বিত্ব সংকটে ভোগেননি। একদিকে ‘সব কা সাথ, সবকা বিকাশ’ ট্যাগলাইন সামনে রেখে রাজনীতি হচ্ছে। অন্যদিকে নির্যাতীত দলিতরা যাতে প্রতিবাদে ভিনধর্মে আশ্রয় না নিতে পাবে, তার জন্যে তারাই আটঘাট বেঁধে নামছে। যে কারণেই ধর্মান্তরণ আইনকে এমন কঠোর করতে চাইছে তারা।
১৯১৫ সালে হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় মদনমোহন মালব্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা’। ১৯২৫ সালে নাগপুর-বাসী ডাক্তার কে. বি. হেডগেওয়ার একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রূপে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছিলেন ভারতীয় জনসংঘ দলটি। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার পর জনসংঘ একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে জনতা পার্টি গঠন করে। ১৯৮০ সালে জনতা পার্টি অবলুপ্ত হলে জনসংঘের প্রাক্তন সদস্যরা বিজেপি গঠন করেন।
বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী। এখন মোদি সরকারের সেকেন্ড ইনিংস চলছে। তবে একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, যিনি সবক সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের কথা বলেছেন তার শাসন কালে সব থেকে আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন সংখ্যাঘুরা। একদিকে চার্চের হামলার ঘটনা বাড়ছে, দলিত নিগ্রহ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। অন্যদিকে ধর্মান্তরণ সামনে রেখে সেই সংখ্যালঘুদেরই আইনত সাজা দেওয়ার ছক হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু রাজ্য কঠোর আইন বানিয়েও ফেলেছে।