পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ দেশের বহু মাদ্রাসাতে অমুসলিমরাও লেখা পড়া করে। দারস্ শব্দের অর্থ পাঠ। যেখানে দারস্ নেওযা হয় সেই জায়গাকে বলে মাদ্রাসা। কিছু মাদ্রাসা আছে যেখানে সাধারণত ইসলাম ধর্মতত্ত্ব- যেমন কুরআন, হাদিস ও দর্শন পড়ানো হয়। আবার বহু মাদ্রাসা আছে যেখানে লেখাপড়া হয় অন্য সাধারণ স্কুল পাঠক্রমের মতোই। কোথাও কোথাও ভাষা হিসাবে আরবি পড়ানো হয়। যেখানে আরবি ভাষা ঐচ্ছিক। এর বেশি কিছু নয়। এমন মাদ্রাসাগুলোতে বহু অমুসলিম পড়ুয়াও পড়াশুনা করে। এই পড়ুয়ারা মূলত তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের বাড়ি থেকে আসে। নিচু জাতের কারণে বহু সময় তারা সাধারণ স্কুলগুলিতে উচ্চবর্ণের পড়ুয়াদের কাছ থেকে হেনস্তার শিকার হয়।
সামাজিক সম্মানের প্রত্যাশায় তারা মাদ্রাসাকে নিজেদের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম করে। কিন্তু সেখানেও এবার দেওয়া হচ্ছে বাধা। অথচ এই মাদ্রাসায় পড়ে বহু অমুসলিম দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড.রাজেন্দ্রপ্রসাদ তাদের মধ্যে অন্যতম। বিহারের সিওয়ানে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। পিতা মহাদেব সহাই শ্রীবাস্তব ছিলেন সংস্কৃত ও ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত। পাঁচ বছর বয়সেই রাজেন্দ্রপ্রসাদকে মাদ্রাসায় ফারসি ভাষা শিক্ষার জন্যে পাঠানো হয়। ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ’ যাকে বলা হয়, সেই রাজা রামমোহন রায়ও পাটনার এক মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবি এবং ফারসি শেখেন।
ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে ছাত্রদের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন কর্তৃক একটি চিঠি প্রকাশ করে বলা হয়েছে শিক্ষার অধিকার আইনের (আরটিই আইন) অধীনে মাদ্রাসা থেকে অমুসলিম ছাত্রদের চিহ্নিত করে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মাদ্রাসায় অমুসলিম ছাত্রদের শনাক্তকরণ এবং সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তি করানো সংক্রান্ত চিঠিটি গত ৮ ডিসেম্বর জাতীয় শিশু কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো জারি করেছিলেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে সাহায্যপ্রাপ্ত ও স্বীকৃত মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অমুসলিম ছাত্রদের চিহ্নিত করতে হবে এবং এবং শিক্ষার অধিকার আইনের অধীনে, তাদের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে হবে এবং সেখানে তাদের শিক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থাও করতে হবে।
মাদ্রাসা নিয়ে হাজার কথা বলা হলেও, বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমে স্কুলের বেহাল দশার কথা আজ আর কারও অজানা নয়। তারপরও হিমন্ত সরকার নিয়ম করে মাদ্রাসাগুলিকে নিশানা করছে।
ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) এর চিঠি অনুসারে, কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাচ্ছে যে সরকার স্বীকৃত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলোতে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে । কমিশনের মতে, এই ব্যবস্থা সংবিধানের ২৮(৩) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
একই সঙ্গে কমিশন এটাও মনে করে যে মাদ্রাসা হল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (এনসিপিসিআর) সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এই ধরনের সাহায্যপ্রাপ্ত এবং স্বীকৃত মাদ্রাসাগুলোর বিশদ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা এডুকেশন কাউন্সিলের চেয়রম্যান ইফতিকার আহমেদ জাভেদ বলেছেন, এনসিপিসিআরের উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা। তিনি বহু অমুসলিম তো সংস্কৃত স্কুলে যায়। তাতে সমস্যা কি। ফতিখার আহমেদ শিশু সুরক্ষা কমিশনের চিঠি প্রসঙ্গে ইফতিকার জাভেদ বলেন, আমরা এনসিইআরটি পাঠ্যক্রমের অধীনে শিশুদের আধুনিক শিক্ষা দিচ্ছি এবং মাদ্রাসায় শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। ইফতিখার আরও বলেন, অমুসলিমরা মাদ্রাসায় পড়ছে এবং অ-হিন্দু শিশুরা সংস্কৃত স্কুলে পড়ছে। বহু ধর্মের পড়ুয়ারা মিশনারি স্কুলে পড়ছে। যদিও আমি নিজে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ) পড়েছি। এনসিপিসিআরের উচিত তাদের পুনর্বিবেচনা করা।