পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত। চলতি মাসের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ৫৬ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তিন দিনব্যাপী এ পর্বে দেশের ১৬টি জেলা ও বিদেশ থেকে আসা মুসল্লিরা একত্রিত হবেন । এরপর ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে আরও ১৬টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে ময়দানের প্রস্তুতি। তুরাগ তীরের ১৬০ একর বিশাল ময়দানে প্রস্তুত নিচ্ছেন শত শত স্বেচ্ছাসেবী। হাড়কাঁপানো এই শীতকে উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুসল্লিরা।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে খুঁটি স্থাপন, তাঁবু টাঙানো, নামাজের লাইন তৈরি সহ নানান কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। শুক্রবার দিনব্যাপীও মুসল্লিদের এসব কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিদেশি মেহমানদের জন্য আলাদা ভাবে অস্থায়ী তাবু নির্মাণ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের চারপাশে কাঁচা-পাকা টয়লেট বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, গাজীপুর থেকে আসা এক মুসল্লি বলেন, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য মেহনত করতে ময়দানে এসেছি এবং স্বেচ্ছায় কাজ করছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আবার বাড়িতে ফিরে যাবো।
দেশের রাজধানীর বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক মজিবুর রহমান জানান, ইজতেমা মাঠে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এবার ২৪টি স্থায়ী খুঁটি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১২টি খুঁটি ইজতেমার চূড়ান্ত প্রস্তুতির আগেই স্থাপন করা হবে।
অন্যদিকে দেশের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। রোগী পরিবহনের জন্য সর্বক্ষণ ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে খবর, ময়দান প্রাঙ্গণ সাফ-সুতরো রাখতে নিয়মিত পানি ছিটানো থেকে শুরু করে মশার ওষুধ দেওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির মজুদ রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভিন দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয় তাই জন্য একাধিক স্বেচ্ছাসেবীদের মোতায়েন করা হয়েছে।
ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। আগত মুসল্লিদের ময়দানে নির্বিঘ্নে প্রবেশের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদে পাঁচটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করবেন।
গত ৬ জানুয়ারি ইজতেমার প্রস্তুতিপর্ব খতিয়ে দেখতে তুরাগ নদের তীরে পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সেখানে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ সার্বিক পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন। এছাড়াও ইজতেমার দায়িত্বভার গ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এদিন তাঁদের প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এদিন তিনি আরও বলেন, ইজতেমার প্রথম পর্ব পরিচালনা করবেন জোবায়ের গ্রুপ দ্বিতীয় পর্ব সাদ গ্রুপ।
বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন দিক নিয়ে দফায় দফায় পর্যালোচনা করেছেন। মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন।
ইজতেমা ময়দানের মুরব্বি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি একদম শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন। ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতিবছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথমপর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (ওয়াসিফুল ইসলামপন্থী) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে। ২০২০ সালে ৫৫ তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।