বিশেষ প্রতিবেদন: করোনা মহামারি শুরুর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের শেষে দেশে বেকারত্বের গড় হার ছিল ৭.৬ শতাংশ। কিন্তু, সেই হার চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর, বেড়ে দাঁড়ায় ৮.২ শতাংশে। ঠিক ১৭ দিন পর, গত ১৮ ডিসেম্বর, সেই বেকারত্বের হার আরও বেড়ে পৌঁছে যায় ৯.১ শতাংশে। ভারতে কর্মহীনদের সংখ্যা ৫ কোটি ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে গত বছরের শেষেই।
এই তথ্য তুলে ধরেছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি। আর এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই এবার গুজরাতের সুরাটে হীরে কোম্পানিগুলি তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। পালিশ করা হীরের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিগত একমাসে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। পশ্চিমাদেশগুলি ও চিনে পালিশ করা হীরের চাহিদা কমে যাওয়াই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অন্যতম কারণ। সুরাট থেকেই ৮০ শতাংশ হীরে পালিশের কাজ হত। সুরাট ভারতের হীরে ব্যবসার মূল কেন্দ্র বলেই পরিচিত। প্রায় ৮ লক্ষ কর্মী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।
সুরাট ডায়মণ্ড অ্যাসোসিয়েশনের (এসডিএ) সেক্রেটারি দামজি মাভানি জানিয়েছেন, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে কর্মচারিরা। এর অর্থ হল ডায়মন্ড কোম্পানিগুলি কর্মী ছাঁটাই করতে চাইছে। হীরে ব্যবসায়ী গুজরাতের ডায়মন্ড ওয়ার্কস ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ টাঙ্ক জানিয়েছেন, ২০০৮ সালেও একইভাবে হীরে কোম্পানিগুলি তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছিল। এবারেও সেই দিন আবার ফিরে এসেছে। ফলে কর্মীরা খুব স্বাভাবিক কারণেই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। পালিশ হীরের চাহিদা কমে যাওয়ায় অর্ডারও কম আসছে। এর ফলেই হীরে কোম্পানিগুলি তাদের কর্মী ছাঁটাই করার পন্থা নিয়েছে। বেশ কিছু হীরে কোম্পানি কর্মীদের কাজের দিনও কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে একজন কর্মী যেদিন কাজ করছে সেইদিন তারা পারিশ্রমিক পাচ্ছে, ফলে বাকি দিনগুলি কর্মীরা কোনও টাকা পাচ্ছে না। ভবেশ টাঙ্ক আরও জানান, সুরাটে গত এক মাসে প্রায় ২০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
পালিশ হীরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় বাজার। গত বছরের নভেম্বর থেকে ভারতের হীরে রফতানি কমতে শুরু করেছে।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (জিজেইপিসি) থেকে জানা গিয়েছে, এপ্রিল থেকে নভেম্বরে রফতানির ব্যবধানে কমেছে। পালিশ করা হীরের মোট রফতানি এক বছর আগের থেকে ৫.৪৩ শতাংশ কমেছে। আরেকটি কারণ হল পালিশ করা সামগ্রীর মূল্য কমে যাওয়া। যদিও শক্ত হীরার মূল্য অত্যাধিক হতে থাকলেও কম চাহিদার কারণে পালিশ করা হীরের চাহিদা কমেছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে।
এসডিএর সেক্রেটারি দামজি মাভানি উল্লেখ করেছেন, যে কর্মচারীরা তাদের চাকরি হারিয়েছেন তারা বিভিন্ন এলাকায় কাজ খুঁজে পাবেন। কারণ বেশিরভাগ কারখানায় ৩০ শতাংশ শূন্যপদ রয়েছে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চিনে মন্দার উদ্বেগের ফলে সুরাটে অনিশ্চয়তার বাতাস বইছে। আমরা জানি না কবে এই অনিশ্চয়তা কাটবে। বিদেশি বাজার থেকে চাহিদা বাড়াতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
জিজেইপিসি’র চেয়ারম্যান বিপুল শাহ জানিয়েছেন, একদিকে চিনে অতিমারির প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বের কিছু অংশে মূল্যস্ফীতির কারণে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। চলতি অর্থ বর্ষের এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এই বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫.৭ বিলিয়ন ডলার অর্জনের জন্য শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির দাবি করে।
হীরে ব্যবসায়ীদের কথায় পালিশ হীরের চাহিদা প্রাকৃতিক অবস্থা, দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক অনিশ্চয়তা, চিনে মন্দার কারণে কমতে থাকছে। যদিও চিন তাদের লকডাউন শিথিল করেছে, কিন্তু ফের এই দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় ফের বহু বাধার সম্মুখীণ হতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রথম বছরে লকডাউনে যখন দেশছুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন সেই সময় কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল অর্থনীতি। তখনও বেকারের মোট সংখ্যা ছিল ৫.৩ কোটি। অর্থাৎ, লকডাউন পরবর্তী সময়েও দেশে বেকারের সংখ্যা কমাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র সরকার, এমনটাই দাবি অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।