পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : পুলিশ হেফাজতে ছেলের মৃত্যুর ‘অভিযোগে’, ইনসাফ চেয়ে এবার ফের বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খাজা ইউনুসের মা। এই নিয়ে ১৫ বার বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করলেন ইউনুসের মা আসিয়া বেগম। ৭৪ বছর বয়সী এই হতভাগ্য মা আসিয়া বেগম ইনসাফের আশায় প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। ২০০৩ সালে পুলিশ হেফাজত থেকেই ২৭ বছরের তরতাজা যুবক ইউনুস নিখোঁজ হয়ে যান। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায় হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশের অমানুষিক অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে ইউনুসের। ২০০৩ সালের পর থেকে আর ছেলেকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পাননি আসিয়া বেগম। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দায়রা আদালতের দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার বম্বে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন হতভাগ্য আসিয়া বেগম।
২৭ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খাজা ইউনুসকে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ঘোটকোপার বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে শেষ জীবিত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। জানা যায়, ইউনুসকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের গাড়ি যখন তদন্তের জন্য যখন ঔরাঙ্গাবাদের দিকে যাচ্ছিল তখন আহমেদনগরে সেই গাড়ি একটি দুর্ঘটনায় পড়ে। সেখান থেকে খাজা ইউনুস পালিয়ে গিয়েছিল বলে পুলিশ একটি অভিযোগ দায়ের করে। এর পর এই মামলা যায় সিআইডির হাতে। সিআইডি পুলিশ হেফাজতে ইউনুসের মৃত্যুর সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সিআইডি ১৪ জন পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন মহারাষ্ট্র সরকার শচীন ভাজে, রাজেন্দ্র তিওয়ারি, রাজারাম নিকম ও সুনীল দেশাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করার অনুমতি দেয়। এই চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা, স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য গুরুতর আঘাত, প্রমাণ জালিয়াতি এবং মামলায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচার শুরু হয়।
ট্রায়াল কোর্টে এক প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানানো হয় মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ইউনুসের উপরে অত্যাচার চালিয়েছিল পুলিশ। এই চারজন পুলিশকেই শেষ ইউনুসের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল।
এদিকে দায়রা আদালত প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া বয়ান অনুযায়ী চার পুলিশ কর্মীকে অতিরিক্ত আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সরকারি আইনজীবীর আবেদন প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়। সেই সঙ্গে ইউনুসের মা আসিয়া বেগমের আবেদন প্রত্যাহার করে আদালত জানিয়ে দেয়, একজন সরকারি আইনজীবীর মাধ্যমেই তিনি তার আবেদন কোর্টের কাছে রাখতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, ইউনুস মামলায় তৎকালীন সরকারি আইনজীবী ধীরাজ মিরাজকার প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের মাধ্যমে এই চার পুলিশ কর্মীকে অতিরিক্ত আসামি করার আবেদন করেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই মিরাজকারকে বিশেষ সরকারি আইনজীবীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। আসিয়া বেগম, ধীরাজ মিরাজকারকে তার আইনজীবী হিসেবে পুনর্বহালের জন্য হাই কোর্টে যান, কিন্তু সরকার তার আবেদনে অসম্মতি জানিয়ে তা প্রত্যাহার করে নিতে বলে। সেই সময় মিরাজকারও এই মামলা লড়তে অস্বীকার করেন।
এরপর সরকার প্রদীপ ঘরতকে বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করে। আইনজীবী প্রদীপ ঘরত বম্বে হাই কোর্টে যুক্ত দিয়ে জানান, খাজা ইউনুসের মামলায় সিআইডি দ্বারা অভিযুক্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে মহারাষ্ট্র সরকার মাত্র চারজনের বিচারের অনুমোদন দেয়। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন আবেদনের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত দায়রা আদালত তার রায় মুলতুবি রাখে।
দায়রা আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আইনজীবী চেতন মালির মাধ্যমে এবার ফের বম্বে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন খাজা ইউনুসের মা আসিয়া বেগম। সেই সঙ্গে আসিয়া বেগম উল্লেখ করেন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী চার পুলিশকে অতিরিক্ত আসামি করার জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে শুনানির নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু দায়রা আদালত সেই আদেশ এড়িয়ে গিয়েছে।