পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : ভারত যে সব ধর্মের মানুষের দেশ সেটি প্রমাণ হল আরও একবার। ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভাজন যে আজও এই দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তা দেখিয়ে দিতে পারেন তামিলনাড়ুর আমগাত্তুচালিল কাননের মতো মানুষেরা। যাদের কাছে আজও মনুষ্যত্ব, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব বোধের কাছে হার মেনেছে ধর্ম।
অসুস্থ মুসলিম শিক্ষিকার জন্য শবরীমালা মন্দিরে আয়াপ্পার আশীর্বাদ পেতে ৩০০ কিলোমিটার পথ হুইল চেয়ারে পাড়ি দিয়েছেন আমগাত্তুচালিল কানন। মাল্লাপুরম থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছে তার। এই কঠিন যাত্রাপথ আগামী ১০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ করতে পারবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমগাত্তুচালিল। তবে এই যাত্রাপথে আমগাত্তুচালিলের সঙ্গী তার হুইল চেয়ার। কারণ তিনি বিশেষভাবে সক্ষম।
তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে তার মানসিক প্রতিবন্ধকতা নয়, সেটাই আমগাত্তুচালিল কানন জানিয়ে দিয়েছেন দৃঢ় চিত্তের সঙ্গে।
কানন দিনমজুরের কাজ করতেন। সেই সময় তার জীবনে দুর্ভাগ্য ঘনিয়ে আসে। ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কানন লরি দুর্ঘটনায় তার একটি পা হারিয়ে ফেলেন। অপর একটি পা’ও তার অবশ হয়ে গেছে। ভরসা হয় হুইল চেয়ার। এই অবস্থায় তিন মেয়ে ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কানন। সেই সময় তার পাশে দাঁড়ান সাংসদ, কনডোট্টির সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপিকা, জাতীয় সার্ভিস স্কিমের কোঅর্ডিনেটর শামিরা। তার জন্য একটি বাড়িও তৈরি করে দেন।
আমগাত্তুচালিল কানন জানিয়েছেন শবরীমালা দর্শনের অন্যতম লক্ষ্য তাঁর মুসলিম শিক্ষিকার জন্য আয়াপ্পার আশীর্বাদ চাওয়া।
আমগাত্তুচালিল আরও জানিয়েছেন, যে সময় তার মাথার ওপর ছাদ ছিল না, সব কিছু হারিয়ে ফেলেছিলেন সেই সময় তাঁর এই মুসলিম শিক্ষিকাই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
কানন জানান, শিক্ষিকা শামিরার জন্যই তার জীবন পুরো পরিবর্তন হয়ে যায়। উনি আমার ও পরিবারের কাছে ঈশ্বরের মতো। আমি আয়াপ্পার একনিষ্ঠ ভক্ত। আমার এই যাত্রা আমার শিক্ষিকার জন্যই। আমার স্থির বিশ্বাস প্রার্থনায় আয়াপ্পা সাড়া দেবেন, শিক্ষিকা শামিরা সুস্থ হয়ে উঠবেন।
৪৯ বছরের কানন গত ১৫ ডিসেম্বর থাডাপ্পারাম্বা গ্রাম থেকে শবরীমালার উদ্দেশে যাত্রা উদ্দেশে শুরু করেন। কানন জানান, তিনি সকাল ৬টায় শুরু করে প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত হুইলচেয়ারে যাত্রা করেন। এর পর শবরীমালা তীর্থযাত্রীদের জন্য মন্দির বা অন্নদানম কাউন্টার থেকে মধ্যাহ্নভোজ সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের রাত ১১টা পর্যন্ত যাত্রা করেন।
কাননের বিশ্বাস জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পাহাড়ের কাছে পেম্বা নদীর কাছে পৌঁছে যাবেন। শবরীমালার মূল মন্দিরে নিজের শরীরের উপর ভর দিয়ে পৌঁছতে চান তিনি।
কাননের বড় মেয়ে প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী। তার অন্যান্য সন্তানেরা স্কুলে পড়াশোনা করে। কাননের স্ত্রী সতীদেবী একটি হোটেলে সাফাইয়ের কাজ করেন।
অধ্যাপিকা শামিরা জানিয়েছেন, কাননের বাড়ি তৈরির পিছনে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। এই আশ্রয় পাওয়ার জন্য বর্ষার সময় সে প্রায়ই তাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানান।