বিশেষ প্রতিবেদন: চিনে ফের ধেয়ে আসছে কোভিড ঢেউ! এই শীতেই করোনার তিনটি ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে বলে সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা। চিনা প্রশাসন সূত্রে খবর, তড়িঘড়ি হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। চিনে করোনার কঠোর বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফের শঙ্কা নতুন করে ভয় ধরাচ্ছে।
চিনের এক উচ্চ পদস্থ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্ভবত এই শীতেই কোভিডের তিনটি ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। যার মধ্যে দেশবাসী ইতিমধ্যেই করোনার প্রথম ঢেউটি প্রত্যক্ষ করেছে।
সরকারের তরফে হাসপাতালের শয্যা সহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। বেজিংয়ের শিজিংশান জেলায় একটি বাস্কেটবল কোর্টে ১৫০টি শয্যার আয়োজন করা হয়েছে। চিনের আরও অনেক শহরেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, জ্বর দেখার জন্য ক্লিনিক গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে রোগীদের জ্বর মাপা ছাড়াও তাদের অন্যান্য উপসর্গ পরীক্ষা করা হবে। বিগত সপ্তাহগুলিতে বেজিং, শিজিংশান, চেং ডু, এবং ওয়েন ঝৌ শহরে একশোটি জ্বর ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে।
সোমবার সপ্তাহের শুরুতেই দেশে দুটি মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছে চিনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। সোমবারের পরে ফের বেজিংয়ে পাঁচটি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চিনে কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে মর্গগুলির অবস্থাও খুবই ভয়ঙ্কর।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে চিনা জনসংখ্যার অর্ধেককে এখনও টিকা দেওয়া হয়নি। ফলে সম্ভাব্য মৃত্যু, ভাইরাস মিউটেশন এবং অর্থনীতিতে আবার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে চিনে অনিচ্ছুক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দিতে রাজি করানো হচ্ছে। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা অনুযায়ী উদ্বেগে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। যাতে করোনার প্রাদুর্ভাব আবার পুনরায় ফিরে না আসতে পারে তার জন্য বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে সর্বত্রই। করোনা সংক্রমণকে ঠেকাতে সাংহাই সহ চিনের বেশ কিছু শহরের স্কুলগুলিকে বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওমিক্রন আবার নতুন রূপ নিয়ে ফেরার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না বিশেষজ্ঞরা। মহামারি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ফেইগিল ডিং সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, চিনে করোনা ভাইরাসটির বর্তমান ঢেউ সম্ভবত আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি সংক্রামিত হতে পারে। মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক মিলিয়নে পৌঁছতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করোনার দ্রুতগতিতে সংক্রমণ মানুষের কাছে একটি হুমকি। ভাইরাসটি সর্বত্রই মানুষের কাছে একটি ভয়ের কারণ।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা এই ভাইরাসের সংক্রমণ চিনের অর্থনীতিকে প্রবল ভাবে ধাক্কা দিতে পারে যা বিগত ৫০ বছরে হয়নি। এটি দেশের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। এই ক্ষতি দেশের আর্থিক বিপর্যয়কে তিন শতাংশ বাড়িয়ে তুলবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
সোমবার বিশ্ব অর্থনীতির একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে চিনের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ডিসেম্বরে ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর থেকে তলানিতে এসে ঠেকেছে।