আসিফ রেজা আনসারী: পৃথিবীতে অনেক ভাষা রয়েছে। ভারতেও রয়েছে নানান ভাষা ও সংস্কৃতি। এদেশে বহুদিন ধরেই আরবি পড়ানো হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরবি ভাষার গুরুত্বও বাড়ছে। শুধু তাই নয়– রাষ্ট্রসংঘের অফিসিয়াল কাজের জন্য স্বীকৃত মোট ৬টি ভাষার মধ্যে আরবিও একটি অন্যতম ভাষা। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পঠন-পাঠন নিয়ে যে গড়িমসি তৈরি হয়েছে– তাতে আহত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা। এ নিয়েই প্রতিবেদক কথা বলেন রাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যাপকদের সঙ্গে। অধ্যাপকদের দাবি– আরবি নিয়ে পড়াশোনা করলে শুধু স্কুল– মাদ্রাসা বা কলেজে শিক্ষকতারই চাকরি হয়না বরং কেরিয়ারের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে। আরবি বুঝতে পারলে বা কথা বলতে সক্ষম হলে বিভিন্ন সংস্থায় নামীদামি পোস্টে চাকরি হচ্ছে।
এ নিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রধান ড. সাইদুর রহমান বলেন– আরবি নিয়ে পড়াশোনা করলে আইটি সেক্টরে যেমন চাকরি হয়– তেমনি বিভিন্ন টু্যরিজম– প্রকাশনা– উড়ান সংস্থা– ফিন্যান্স– ব্যাঙ্কিং সেক্টরে চাকরি পাওয়া যায়।সাধারণ চাকরির থেকে বেশি মাইনে নিয়ে চাকরি করছেন আমাদের বেশ কয়েকজন প্রাক্তনী।
তিনি আরও বলেন– অনেকে মনে করেন আরবি নিয়ে পড়াশোনা করলে হয়ত শিক্ষকতারই চাকরি পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা মুসলিম ছেলেমেয়েরাই আরবি নিয়ে পড়াশোনা করেন। আসলে তা সঠিক নয়। আরবি বা সংস্কৃত নিয়ে ধর্মের আগল ভেঙে অনেকেই পড়াশোনা করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি রাজা রামমোহন রায়ের নামও স্মরণ করেন। উল্লেখ্য– রাজা রামমোহন রায় আরবি– ফার্সি– উর্দু-সহ নানান ভাষা চর্চা করেন। তিনি পাটনার একটি মাদ্রাসা থেকে মাওলানা ডিগ্রিও অর্জন করেন।
অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন– অ্যামাজন– টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস– গুগল– আমিরাত এয়ার লাইন্স-সহ বিভিন্ন সংস্থা আরবি জানা ছেলেমেয়ের নিয়োগ করে।
অন্যদিকে মালদা কলেজের আরবি বিভাগের অধ্যাপক তাসলিম আহমাদ বলেন– আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করলে কেরিয়ারের ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন আরবি শুধু মুসলিমরাই পড়াশোনা করে– আসলে তা নয়। বহু হিন্দু ছেলেমেয়ে আরবি নিয়ে পড়াশোনা করে দিল্লি– মুম্বাই– বেঙ্গালুরু– চেন্নাই ছাড়াও বিদেশে চাকরি করছে।
কিছুদিন আগে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন পড়ুয়া অ্যামাজনে চাকরি পেয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুহাম্মদ সানোয়ার হোসেন– উত্তর ২৪ পরগনা তৌসিফ আলম– মালদার সামিম আখতার বা দক্ষিণ দিনাজপুরের হেফজুর রহমান ও সাইফুল ইসলামরা হলেন সফল পড়ুয়া– যারা আরবি নিয়ে এম.এ কোর্স শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়েছিলেন। বছরে প্রায় সাত লাখ টাকা করে স্যালারি পান তারা।