পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সংখ্যালঘু বৃত্তি বন্ধ ঘোষণার পর আরও একটি চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৩ সাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হল মাওলানা আজাদ ন্যাশন্যাল ফেলোশিপ স্কীম। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গবেষক ছাত্রদের জন্য এই স্কলারশিপ চালু করা হয়েছিল কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার আমল থেকেই। সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে আনার জন্য সাচার কমিটির প্রস্তাব মেনে এই ফেলোশিপের ব্যবস্থা করা হয়। মাওলানা আজাদ এডুকেশন ফাউন্ডেশনকে এই স্কীম বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় এই স্কীমের মাধ্যমে। পাঁচ বছরের জন্য সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের এমফিল ও পিএইচডি করার জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। দেশের নির্দিষ্ট পাঁচটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছিল এই স্কীম। মুসলিম ছাড়াও শিখ, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ও পার্শি পড়ুয়ারা এই সুবিধা পাচ্ছিলেন, ২০২৩ থেকে এই স্কীম বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়বেন গবেষক পড়ুয়ারাও।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় এই বিষয়ে কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জানান সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য অবশ্য অনেক স্কীম রয়েছে। সেগুলোর সাথে অতিক্রমণ বা ওভার ল্যাপিং হচ্ছে। সে কারনে মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করার সিদ্ধন্ত নেওয়া হয়েছে। স্মৃতি ইরানি সংসদে জানান ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই স্কীমের জন্য মনোনীত হয়েছে ৬৭২২ জন, আর মোট ৭৩৮.৮৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। কংগ্রেস সাংসদ টিএন প্রযাপনের এক প্রশ্নের উত্তরে ইরানি জানান, এই ধরনের বহু স্কীম রয়েছে ওপেন টু অল, সব সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য, একমাত্র মাওলানা আজাদ ফেলোশিপ ছাড়া। এই স্কীমে কেবল মাত্র সংখ্যালঘুরাই উপকৃত হচ্ছিল। কংগ্রেস সাংসদ বলেন, এটা সম্পূর্ণ না-ইনসাফী ও অবিচার। বহু সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হবে এই স্কীম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে-গবেষণারত পড়ুয়ারাও চরম বিপদে পড়বেন। তিনি বলেন এই বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস সংসদে অবশ্যই সরব হবে এই শীতকালীন অধিবেশনে।
এমনিতেই এই স্কীমের অনুদান পেতে বিলম্ব হচ্ছিল দীর্ঘ সময় থেকেই। ফলে অনুদান প্রাপ্ত পড়ুয়ারা অসুবিধার মধ্যে ছিল। এখন সম্পূর্ণ স্কীম বন্ধ করে দেওয়ার এই ঘোষণায় তাদের মাথায় হাত। জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এনএস আবদুল হামিদ তাঁর ট্যুইটার মারফত আবেদন জানিয়েছেন। সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন, না হলে বহু ছাত্রছাত্রী সংকটের মধ্যে পড়বে। তিনি লিখেছেন, এই ভাবে কি ‘সবকা বিকাশ’ সম্ভব? মাওলানা আজাদের মতো মহান এক ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করা এই ছাত্রবৃত্তি বন্ধ করা হচ্ছে, এটা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অবমাননা। আমরা দাবী জানাচ্ছি অবিলম্বে এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা হোক। উল্লেখ্য, সংখ্যালঘুদের জন্য প্রি ম্যট্রিক বা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বৃত্তি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সরকারি নির্দেশ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। তামিলনাড়ু থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি পত্র লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন এই স্কীম বন্ধ না করার জন্য। এখন আবার কোপ পড়ল উচ্চ শিক্ষায়। ছাত্রছাত্রীদের অভিমত বর্তমানে বৃত্তির জন্য যে নিয়ম করা রয়েছে তাতে কোনও ছাত্রছাত্রীর পক্ষে একাধিক স্কীমের সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠছে একাধিক সুবিধা গ্রহণের। সংখ্যালঘু শিক্ষাবিদদের অভিমত পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে শিক্ষায় এগিয়ে আনার জন্য এই সব স্কীম ও স্কলারশিপ চালু করা হয়। এর ফলে শিক্ষায় কিছুটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। কিন্তু বিজেপি আমলে সেই সব স্কীমের উপর কোপ পড়েছে। স্কীম ও স্কলারশিপ বন্ধ করে সংখ্যালঘুদের শিক্ষার বিকাশ কীভাবে চাইছে বিজেপি সরকার।