পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ হিমাচলপ্রদেশে কংগ্রেস যে এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, বিজেপির থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবে, তা বোধহয় অনেকেই ভাবতে পারেনি। সমীক্ষা রিপোর্টে কংগ্রেস ভালোমতো টক্কর দেবে সেই উল্লেখ ছিল। কিন্তু, এভাবে একেবারে জয় ছিনিয়ে নেবে এটা বোধহয় কল্পনা করা যায়নি। দিল্লি এমসিডিতে পরাজয়ের পর বিজেপি শিবিরের বক্তব্য ছিল পুরসভা হাতছাড়া হলেও বিজেপি জোড়া উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশের ভোট নিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তারা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, একমাত্র গুজরাত ছাড়া আর কোথাও সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি বিজেপি। বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশার উপনির্বাচনেও বিজেপির ফল মোটেই ভালো হয়নি। এককথায়, গুজরাত ভোটের বড় জয়ই সান্ত্বনা বিজেপির। অন্যদিকে, বিজেপিকে হারিয়ে হিমাচলে জয়ের স্বাদ পেয়ে চাঙ্গা হাতশিবির। দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেস সভাপতির আসন ফাঁকা থাকার পর সম্প্রতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে সেই পদে বসানো হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ইনিংস শুরর প্রথমেই এই জয় তাঁকেও স্বস্তিতে রাখবে। তবে কংগ্রেসের এখন একমাত্র ভয়, বিজেপি যেকোনও সময় ঘোড়া কেনাবেচা করে পাসা উলটে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তা নিয়ে অবশ্য এবার প্রথম থেকেই সতর্ক হাত শিবির। গোয়ার ভুলের পুনরাবৃত্তি আটকাতে তারা মরিয়া।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, হিমাচলে কংগ্রেস দখল করেছে ৪০টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ২৫টি আসন। অন্যান্যরা পেয়েছে ৩টি আসন। ৬৮ বিধানসভা আসনে ম্যাজিক ফিগার ৩৫। সেই হিসেবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়ার দাবিদার কংগ্রেস। তবে, ভোট পরবর্তী অধ্যায়েও চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি বিজেপি। সরকার হাতছাড়া হওয়ার এতটুকু সুযোগও হাতছাড়া করতে নারাজ তারা।
ভোটের ফল প্রত্যাশ্যা মতো না হলেও যাতে সরকার গড়া যায় তার চেষ্টা এ দিন শুরু থেকেই করে দিয়েছিল পদ্মব্রিগেড। ভোটের গণনা শুরুর আগেই নির্দলদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করে পরিস্থিতি ঝালিয়ে নেয় বিজেপি। হেভিওয়েট নির্দলদের সঙ্গে তৈরি করে ফেলে ভোটপরবর্তী রণকৌশলও। একটি ছবি এ দিন ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে হিমাচলে জয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির ওজনদার নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ।
মনে করা হচ্ছে, ছবিটি বিজেপি শিবির থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, জয়ের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য নির্দল প্রার্থীকে এই বার্তা দেওয়া যে, বিজেপি তাদের পেতে আগ্রহী। পাহাড়-রাজ্য হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরের বাড়িতে এ দিন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে বসে। সেখানেও এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, জেতার পরও কংগ্রেসের এখন প্রধান মাথাব্যথা জয়ী প্রার্থীদের দলে ধরে রাখা। বিজেপির অপারেশন লোটাসের থাবা থেকে নিজের বিধায়কদের রক্ষা করতে রাজ্য কংগ্রেস নেতারাও পরামর্শ করতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, ভোটের পর ‘অপারেশন পদ্ম’ আটকাতে দলের বিধায়কদের কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড় অথবা রাজস্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তাছাড়া ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল নিজে হিমাচলে ভোটের দায়িত্বে ছিলেন। হিমাচলের জয়ী বিধায়কদের চণ্ডীগড় হয়ে ছত্তিশগড়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর শপথগ্রহণের দিন সেখান থেকে সোজা শিমলায় নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের। পরে আবার সেই সিদ্ধান্তও বদল হয়। বিধায়কদের কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে দিনভর জল্পনার পর শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তাঁদের পঞ্জাবের মোহালির রেডিসন হোটেল রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।
হিমাচলপ্রদেশ হচ্ছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নিজের রাজ্য। একদিকে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাতে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বিজেপি, সেখানে বিজেপি সভাপতির রাজ্য হাতছাড়া হওয়াটা মোটেই হালকাভাবে নেবে না পদ্ম শিবির তা বিলক্ষণ জানে কংগ্রেস। সেই কারণেই ভূপেশ বাঘেলের নিরাপদ আশ্রয়ে বিধায়কদের রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এ দিকে ভোটে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা জয়রাম ঠাকুর। ইতিমধ্যে তিনি নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
হিমাচলে জয় নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান রাহুল গান্ধিও। তিনি জানান, কংগ্রেস যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার সবটাই পূরণ করা হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিজেপির এই পরাজয়ের কারণ কী? রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, অগ্নিবীর ও নতুন পেনশন স্কিমের মতো ইস্যুগুলিই বড় ধাক্কা দিয়েছে তাদের। হিমাচলের একটা বড় অংশের তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সেনাবাহিনীতে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ফলে অগ্নিবীর স্কিমকে তারা ভালোভাবে নেয়নি। আর নতুন পেনশন প্রকল্পে আগের মতো আর খরচের প্রায় সবটাই কেন্দ্র বহন করবে না। নয়া ব্যবস্থা কর্মচারীদের বেতন থেকে পেনশনের টাকা কেটে রাখা হয়। এমনকী আরএসএস-ও এই নয়া পেনশন প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল।