পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: শ্রদ্ধা ওয়াকার খুনের একের পর এক বিস্ফোরক বয়ান দিয়ে চলেছেন অভিযুক্ত আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। পুলিশের কাছে ইতিমধ্যেই আফতাব জানিয়েছে, সেই শ্রদ্ধাকে খুন করেছে।
গত ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করার পর তার পর কিভাবে ইন্টারনেট দেখে ও ওয়েব সিরিজ ‘ডেক্সটার’ দেখে সমস্ত খুনের পরিকল্পনা আঁটে সে তারও চাঞ্চল্যকর বয়ান দিয়েছেন আফতাব। খুনের পর শ্রদ্ধার দেহের ৩৫টি টুকরো করে দিল্লির মেহরাউলির জঙ্গলে ছড়িয়ে দিয়েছে সে। এবার আফতাবের চাঞ্চল্যকর বয়ান, গত ৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করতে গিয়েছিল সে। শ্বাসরোধ করতে গিয়ে শ্রদ্ধা কান্নাকাটি শুরু করায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে সে। পরে ১৮ মে নারকীয় ঘটনা ঘটনা আফতাব।
মুম্বইয়ের একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কল সেন্টারে কাজ করতেন শ্রদ্ধা। সেখানেই বাম্বেল নামে একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আফতাব ও শ্রদ্ধার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভিন্ন ধর্মী সম্পর্ক শ্রদ্ধার বাবা কোনোদিনই মেনে নেননি। পরে মুম্বই থেকে দূরে দিল্লিতে এসে মেহরাউলিতে একটি ভাড়ার ফ্ল্যাট নেন, সেখানে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকতে শুরু করেন দুজনে।
এদিকে শ্রদ্ধার মনে হত, ওই ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আফতাব আরও অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক করছে। এই নিয়ে দুজনের অশান্তির সূত্রপাত। শ্রদ্ধা বার বার আফতাবকে তাকে বিয়ে করতে বলায় অশান্তি চরমে ওঠে।
শ্রদ্ধার সন্দেহ ছিল, আফতাব অন্য কারোর সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলতও সে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইন ডেটিং অ্যাপ বাম্বলে পরিচয় হয়েছিল শ্রদ্ধা ও আফতাবের। তিন বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। সম্প্রতিই তাদের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। শ্রদ্ধার সন্দেহ ছিল, আফতাব অন্য কারোর সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলতও সে। যার প্রেমে পড়ে পরিবার ছেড়ে এসেছিলেন, তাঁর হঠাৎ মন বদলেই অত্যন্ত মুষড়ে পড়েছিলেন শ্রদ্ধা। দুজনের মধ্যে অশান্তি ক্রমশ বাড়তে থাকে।
গত ১৮ মে ফের বচসা হয় আফতাব ও শ্রদ্ধার মধ্যে। ঝগড়ার সময় আফতাব শ্রদ্ধার বুকের উপরে বসে পড়ে এবং গলা টিপে ধরে। খুনের পরেরদিন, মাংস কাটার ছুরি দিয়ে শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে, সেই অংশগুলি নতুন ৩০০ লিটারের ফ্রিজে জমিয়ে রাখে। দেহের বাকি অংশের থেকে মাথা আলাদা রাখে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে। প্রত্যেকদিন ফ্রিজ খুলে শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডু দেখত সে, এমনটাও জানা গিয়েছে তদন্তে।
শ্রদ্ধা খুনের ১৫ দিন পরেই এক তরুণীকে সেই ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে আফতাব। ফ্ল্যাটে থাকা অন্যান্য বাসিন্দাদের কথায়, কারুর সঙ্গে সেভাবে মিশত না আফতাব, তবে প্রায়ই বিভিন্ন তরুণীকে তারা তাদের ফ্ল্যাটে আসতে দেখেছে। যেখান থেকে শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলি রাখার জন্য ৩০০ লিটারের ফ্রিজ কিনেছিল, সেই দোকানের কর্মচারী পুলিশকে জানিয়েছেন, দোকানে আসার ১০ মিনিটের মধ্যেই ফ্রিজ কিনে নেয় সে।
গতকালই পুলিশ আফতাবকে দক্ষিণ দিল্লির মেহরৌলিতে নিয়ে জঙ্গলে তল্লাশি চালানো হয়। তিনঘণ্টা পুলিশের তল্লাশি অভিযান চলে। দেহের ১৩টি টুকরো উদ্ধার করা হয়। এখনও অবধি দেহাংশে ভর্তি মোট ১০টি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। নিশ্চিত হতে দেহাংশের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। ঘটনার পূর্ণর্নির্মাণ করা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার কড়া নজরদারিতে জেলে রয়েছে আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। সেখানেও নিশ্চিন্তভাবে তাকে ঘুমোতে দেখা গেছে, যেভাবে শ্রদ্ধাকে খুন করার পরেও নিশ্চিন্ত কাটাচ্ছিলেন আফতাব।