কৌশিক সালুই,বীরভূম, মধ্যযুগীয় ফতোয়া জারি করে প্রায় দেড় বছর ধরে সামাজিকভাবে বয়কট থাকা এক আদিবাসী পরিবারকে সহায়তা করার উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা আদিবাসী উন্নয়ন গাঁওতা এবং জেলা পুলিশ।
একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে সমাজের বিবাদ হয় তার জেরেই বয়কট করা হয় ওই পরিবারকে বলে অভিযোগ। সুবিচারের দাবিতে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে দ্বারস্থ হন ওই পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে কালিদাসী চোড়ে (মারান্ডি) বাড়ি শান্তিনিকেতন থানার বালি পাড়া গ্রামে। তিনি গত শুক্রবার সিউড়িতে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যে বিগত এক বছর আট মাস ধরে গ্রামবাসীদের সামাজিক বয়কটের স্বীকার হয়েছেন তারা। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালের ১০নভেম্বর।
অভিযোগ কয়েকজন গ্রামবাসী কালিদাস ও তার স্বামী ছোটন মারান্ডিকে স্থানীয় একটি ক্লাবের চাবি চুরি করার অপবাদ দিয়ে মারধর করে তাদের সমাজের পুরোহিত সুকোল হেমব্রম। আরও অভিযোগ তাকে এই ঘটনায় পুরো মদত দিয়েছেন ওই গ্রামের মোড়ল সুনীল হাঁসদা। সেই সময় শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে দাবি ওই পরিবারের। ওই ঘটনার পর কালিদাসী ও তার পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কটের ডাক দেন অভিযুক্তরা। নিদান দেওয়া হয় ওই পরিবারের কারোর সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বলবে না বিবাহ অথবা শ্রাদ্ধ বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে ওই পরিবারকে কোন আমন্ত্রণ জানানো হবে না বা ওই পরিবারের কোনো নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা হবে না। কেউ এই ফতেয়া অমান্য করলে ১০০০০ টাকার জরিমানা করা হবে বলে তখন জানানো হয়। প্রবল মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে ওই পরিবার সমস্ত কিছু সহ্য করলেও এবার জেলা পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন তারা। শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে ওই গ্রামে গিয়ে পরিবার এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ইতিমধ্যেই বীরভুম জেলা আদিবাসী উন্নয়ন গাওতা বিষয়টি জানার পর পরিবারের পাশে দাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।গ্রামের মোড়ল কোলকাতায় আছেন। তিনি ফিরলে দুই পক্ষকে নিয়ে পুলিশ মধ্যস্থতা করে মীমাংসা করবে। বীরভূম জেলা আদিবাসী উন্নয়ন গাঁওতা সম্পাদক রবিন সরেন বলেন,” বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে”। বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী বলেন,” পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদি না হয় সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। কালিদাসী চোড়ে বলেন,” যারা আমাদেরকে বয়কটের ডাক দিয়েছিল তাদের মধ্যে একজনের বাবা হলেন স্কুল শিক্ষক। শিক্ষিত পরিবার হয়েও বর্তমান সময়ে কিভাবে এখনো মধ্যযুগীয় ফতেয়া জারি করতে পারেন। আমরা বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি”।