পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : কাশ্মীর বলতেই খবরের শিরোনামে উঠে আসে অশান্ত উপত্যকা। গোলা বারুদ থেকে গুলি, বন্দুকের নলের সামনে রক্তাক্ত দেহ। কিন্তু এই বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে লড়াই করে বড় হয়ে উঠলেন রুবেদা সালাম। তিনি এক লড়াইয়ের নাম। একজন আইপিএস অফিসার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন রুবেদা। শুধু তাই নয়, তিনিই জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা আইপিএস আধিকারিক।
একদিকে সমাজের চোখ রাঙানি, উত্তপ্ত কাশ্মীরের জন-জীবন, শৈশব থেকে সেনা বাহিনীর ভারী বুটের শব্দ, পরিস্থিতির চাপে স্কুলছুট সবই ছিল রুবেদার জীবনে। তাও সেই পরিস্থিতিতে থামলেন না রুবেদা সালাম। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকলেন তিনি।
কাশ্মীরের কুপওয়াড়ার ফারকিনে জন্ম রুবেদার। রুবেদার কথায়, প্রায়ই অশান্ত থাকত উপত্যকা। চারদিকে বোমা-গুলির লড়াই, সেনা জওয়ানদের ভারী বুটের শব্দ এই নিয়েই ছিল শৈশব। যে বয়সে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের চারদিকে খেলাধুলো করে বেড়ানোর কথা, সেই বয়সে ভয়ে কুঁকড়ে অনেক সময় বালিশে মুখ গুঁজে কেটেছে। পড়াশোনা শুরু হলেও সেই পথও মসৃণ ছিল না। কারণ অশান্ত পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ। তাই বাড়ির মধ্যেই চার দেওয়ালই ছিল সঙ্গী।
রুবেদা জানিয়েছেন, তবে এই পরিস্থিতিতেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি তিনি। রুবেদার বাবার স্বপ্ন ছিল একদিন তার মেয়ে আইপিএস অফিসার হবেন। বাবার সেই ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপায়িত করতে লড়াইটা কঠিন হলেও হাল ছাড়েননি রুবেদা।
রুবেদা আরও জানিয়েছেন, যে সমাজে তিনি বড় হয়েছেন, সেখানে এক জন মহিলা আইপিএস অফিসার হবেন, সেই বিষয়টি অনেকেই ভালো চোখে দেখেননি। কিন্তু সেই সমালোচনা তাকে দমাতে পারেনি। লড়াইটা যে কঠিন হবে তার জন্য প্রথম থেকেই প্রস্তুত ছিলেন তিনি। তবে রুবেদা একজন আইপিএস অফিসার হওয়ার পাশাপাশি একজন চিকিৎসক। শ্রীনগর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছেন। তবে ডাক্তারির পথে না গিয়ে ইউপিএসসির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
রুবেদা আরও জানিয়েছেন, আইপিএসকে বেছে নেওয়া জীবনের আমার কাছে ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আইপিএস পাশ করার পরেও এই পদে কাজ করতে পারব কিনা, পরিবার বা সমাজ কিভাবে নেবে তা নিয়ে একটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই ভয়, লড়াইটা আরও সহজ করে দিয়েছিল আমার পরিবার। শৈশব থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত আমার প্রতিটি সিদ্ধান্তে পরিবারকে সব সময় পাশে পেয়েছি।
২০১৩ সালে প্রথম ইউপিএসসি পরীক্ষা। জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা হিসাবে ইউপিএসসি পাশও করেন রুবেদা। তিনিই জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা আইপিএস আধিকারিক।
আইপিএস পাশ করার পর হায়দরাবাদে প্রশিক্ষণ নেন রুবেদা সালাম। রুবেদার কথায়, খুব কঠিন প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। প্রশিক্ষণ শেষে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার হিসাবে যোগ দিই। তামিলনাড়ুতে যখন দায়িত্ব পেয়েছিলাম, দেখেছি সেখানে পুলিশকে কী ভাবে মানুষ সম্মানের চোখে দেখেন।
হায়দরাবাদে একটি ওয়ার্কশপ করেছিলাম। সেই ওয়ার্কশপে যে সব তরুণী, যুবতীরা এসেছিলেন, দেখেছিলাম তাঁদের চোখে আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের চোখে ছিল সমাজের চোখ রাঙানির ভয়।
নিজের সাফল্য নিয়েই থেমে থাকতে চান না রুবেদা সালাম। কাশ্মীরের মহিলারা যাতে এগিয়ে আসতে পারে, তার জন্য সর্বদা সচেষ্ট তিনি। রুবেদা জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য কাশ্মীরের মহিলাদের আরও বেশি করে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উৎসাহিত করা। যাতে এই সমস্ত মহিলাদের পাশে তাদের পরিবার থাকে তার জন্য তাদের সঙ্গেও কথা বলছেন তিনি। রুবেদা মনে করেন, একটি মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে যদি পরিবার যদি তার পাশে দাঁড়ায় তাহলে লক্ষ্য পূরণ অনেক সহজ হয়ে যায়।
রুবেদা জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে। কিন্তু সেই প্রতিভা সামনে আসতে পারছে না। কারণ অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। পরিবার, পরিস্থিতি তাদের স্বপ্নপূরণে প্রধান অন্তরায়। তাই রুবেদার ইচ্ছে, নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি কাশ্মীরের মেয়েদের মধ্যে সেই আইপিএস গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবেন। তার স্থীর বিশ্বাস এই কাজে তিনি অবশ্যই সাফল্য পাবেন।
নিজের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের এগিয়ে নিয়ে চলার কর্তব্য নিভৃতে পালন করে চলেছেন রুবেদা সালাম। রুবেদা জানেন অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে, তবে থামলে চলবে না। কারণ রুবেদারা থামতে শেখেননি।