পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সত্ত্বর নির্বাচনের দাবিতে ইসলামাবাদমুখী লং মার্চের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হলেন। তবে পায়ে গুলি লাগায় এবং বন্দুকবাজকে জনতা লক্ষ্যভ্রষ্ট করায় ইমরান খান আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নতুন পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। চেয়েছিলেন ভারতের সঙ্গে সু-সম্পর্কও। একাধিকবার ভারতের গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘ঘোড়া কেনাবেচা’র খেলায় শেষ বল পর্যন্ত লড়ে পরাজিত হন তিনি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত সেনাবাহিনী ইমরানের প্রতি আস্থা নেই বলে চাপ সৃষ্টি করে। চলে যায় তাঁর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি এবং পার্লামেন্টের সদস্য পদ। চেষ্টা হয়েছিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকারও তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার। কিন্তু উচ্চ আদালত জানিয়েছে, ইমরান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন।
ইমরান খান, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পিটিআই দলের চেয়ারম্যান। শুরু করেছেন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। চলতি বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দীর্ঘ পদযাত্রায় নেমেছেন তিনি। সঙ্গে পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ জনতা। সেই লড়াই করতে গিয়েই বৃহস্পতিবার প্রাণঘাতী হামলায় মরতে মরতে বাঁচলেন ইমরান।
বৃহস্পতিবার গুজরানওয়ালায় ‘আজাদি মার্চ’-এর মিছিল নিয়ে এগনোর সময় পাকিস্তান ‘তেহেরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক ব্যক্তি।
গুলি লাগে ইমরানের ডান পায়ে। অন্য একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, ইমরানের দু’ পায়ে ৪টি গুলি লেগেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দ্রুত প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্তাক্ত হন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেনেটর জাভেদ খান সহ ৯জন। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ইমরানকে। পরে স্থানান্তরিত করা হয় লাহরের শওকত খানুম মেমোরিয়াল হাসপাতালে। এই হাসপাতালটি তাঁর মায়ের নামে ইমরানই তৈরি করেছিলেন।
সেখান থেকেই পাক সংবাদমাধ্যমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা নিয়ে মুখ খুললেন ইমরান। বললেন, ‘আল্লাহ্ আমাকে পুনর্জীবন দিলেন। নতুন উদ্যমে লড়াই চালিয়ে যাব আমি।’ এদিনের মিছিলে হামলায় ফয়জল জাভেদ ও আহমেদ ছাত্তাহা নামে পিটিআইয়ের আরও দুই নেতাও গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদেরও রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ইমরান ও বাকি রাজনৈতিক দলের নেতাদের লক্ষ্য করে মোট ৬ রাউন্ড গুলি চালায় হামলাকারী। অভিযুক্তকে আর কেউ বা কারা সাহায্য করেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে তারা। হামলার পর পিটিআই সমর্থকরা আততায়ীকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এদিকে এই হামলার পর আন্দোলন আরও জোরাল কারর ডাক দিয়েছে পিটিআই। ইমরান সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি তাঁদের নেতার উপর এই হামলাকে খুনের চেষ্টা বলে দাবি করেছেন।
পাকিস্তানের জনতা ইমরানকে কতটা ভালবাসে, তা ঘটনাস্থলের কিছু ভিডিয়ো ফুটেজ থেকে স্পষ্ট। সেখানে দেখা যাচ্ছে ইমরানের উপর হামলার পর জনতার ঢল ছুটে গিয়েছে তাঁদের প্রিয় নেতার শারীরিক অবস্থা জানতে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কন্টেইনার গাড়ির নীচে তাঁকে লুফে নেবে বলে সমর্থকরা জোটবেঁধে রয়েছেন। ঠিক যেমন ক্রিকেট ময়দানে জয়ের পর তাঁর সতীর্থরা তাঁকে কোলে তুলে নিতেন, ঠিক যেন সেভাবেই। সেই হাতগুলোর ভরসাতেই নিজেকে ধীরে ধীরে সমর্পণ করলেন গুলিবিদ্ধ বিধ্বস্ত ইমরান। সমর্থকরা তাঁকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়েতুলে দিলেন বুলেট প্রুফ কালো কাচের গাড়িতে। গাড়ি ছুটতে শুরু করল হাসপাতালের দিকে।
ইমরানের উপর হামলার নিন্দা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো প্রমুখ। শাহবাজ বলেন, ‘পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের উপর গুলি চলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করি। অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীকে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। ওঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আশাকরি বাকিরাও দ্রুত সেরে উঠবেন।’
বিলাওয়াল ভুট্টো ট্যুইটে লেখেন, ‘হামলার তীব্র ধিক্কার জানাই। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’ ইমরানের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও।
ইমরান খানের উপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের উপর হামলার ঘটনা আমরা সবেমাত্র জেনেছি। গোটা ঘটনার উপর আমরা নজর রাখছি। এই নিয়ে যাবতীয় খবরের দিকে আমাদের নজর রয়েছে। এখনই এই নিয়ে ভারত কিছু মন্তব্য করতে চায় না।’