পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: জন্মানোর পরেই শিশুকে হিন্দুত্ববাদের পাঠ দিতে চাইছে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকার। সম্প্রতি লখনউয়ের আমিনাবাদ ইন্টার কলেজের পড়ুয়াদের জন্য নির্বাচিত ইংরেজি বর্ণমালার বইয়ের চেহারা দেখে তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিফহাল মহল।
ইংরেজরা ভারতে আসার পর থেকে ভারতবাসীর সঙ্গে ইংরেজি ভাষার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সূত্রে আজ পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট ছকে ভারতের কচিকাচাঁরা ইংরেজি শিখছে। যেমন, এ ফর অ্যাপেল, বি ফর বল, সি ফর ক্যাট বা এই ধরণের অন্য কোনো শব্দ। এতবছর ধরে ইংরেজি বর্ণমালা শেখার এই পদ্ধতি চালু থাকলেও এখন বর্ণমালার শিক্ষায় নতুন করে হিন্দুত্ববাদকে
অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে লখনউয়ের ওই স্কুলে। সেখানকারকার পাঠ্য বইতে লেখা হয়েছে, এ ফর ‘অর্জুন’, বি ফর ‘বলরাম’। এভাবে ইংরেজি বর্ণমালার ২৬ টি অক্ষরকে বিভিন্ন পৌরাণিক অথবা ঐতিহাসিক চরিত্রের নামের সঙ্গে জোড়া হয়েছে। অর্জুন, বলরাম ছাড়াও তালিকায় জায়গা করেছেন চাণক্য, ধ্রুব, একলব্য, গায়েত্রী মাতা, হনুমান, ইন্দ্র, জটায়ু, কৃষ্ণ, লব-কুশ, নারদ, রাম, সহ আরও অনেকে। আমিনাবাদ ইন্টার কলেজের প্রধান শিক্ষক সাহেব লাল মিশ্রের যুক্তি, ‘ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের ধারণা খুব কম। তাই আমরা ওদের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ওই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ কিন্তু তাঁর যুক্তি নিয়ে উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। কারণ ভারতের ‘সংস্কৃতি’র নামে ২৬টি বর্ণমালার মধ্যে ৯০ শতাংশ জুড়ে আছে হিন্দু দেব-দেবীর নাম।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি প্রধান শিক্ষক ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে হিন্দু দেবদেবীদের কথায় বোঝেন? নাকি ‘হিন্দুত্ববাদ’ এর পরিবর্তে ‘ভারতীয় সংস্কৃতি’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন প্রধান শিক্ষক?
লখনউয়ের শিক্ষকদের একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপেও পাঠ্য বই এর পিডিএফ ছড়িয়ে পড়েছে। ১২৫ বছরের পুরোনো আমিনাবাদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সিতাপুরের এক বাসিন্দা এই বর্ণমালার তালিকা তৈরি করেছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে চান না তিনি। শুধু ইংরেজি নয় শিশুদের হিন্দি বর্ণমালা শেখাতেও একই ধরণের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই বইয়ের জনপ্রিয়তা আঁচ করে ইতিমধ্যেই মেরঠের একজন প্রকাশক ওই বই ছাপার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এর আগেও হিন্দুত্ববাদে শান দিতে বিজেপি শাসিত কর্ণাটকের স্কুল পাঠ্যে লেখা হয়েছিল, ভি ডি সাভারকর আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে প্রতিদিন বুলবুল পাখির ডানায় ভর করে উড়ে যেতেন তাঁর মাতৃভূমিতে। তাছাড়া ইতিহাস বই থেকে বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের কথা মুছে ফেলে ইতিহাস বিকৃত করার প্রচেষ্টাও করে বিজেপি। বর্ণমালার পরিবর্তনের কথা সামনে আসার পর যোগী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল।