পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক আচরণ ও বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হয়েছিলেন দলিত মেধাবি ছাত্র রোহিত ভেমুলা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ। সেই ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। দলিতদের প্রতিবাদের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন রোহিত। সেই রোহিতের মা রাধিকা ভেমুলা কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় পথ হাঁটলেন রাহুল গান্ধির সঙ্গে। বার্তা দিলেন, বিজেপি, আরএসএসের হাত থেকে দেশের সংবিধানকে বাঁচাতে হবে। ভারতকে জুড়ে রাখতে হবে। না হলে দলিতদের, আদিবাসীদের, মুসলিমদের প্রতি বঞ্চনা চলবে। সমাজ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হবে। সেই বিচ্ছিন্নতাকে রুখতে ভারতকে জুড়তে হবে। যাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ নির্বিশেষে আত্মমর্যাদায় বাঁচতে পারে।
মঙ্গলবার ছিল ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার ৫৫তম দিন। দলীয় নেতা-কর্মী ও বহু সাধারণ মানুষের সঙ্গে তেলেঙ্গানা থেকে হেটে হায়দরাবাদ আসছিলেন রাহুল। হঠাৎই দেখলেন তাঁদের দিকে হেঁটে আসছেন রোহিত ভেমুলার মা। বুঝতে পারলেন তাঁদের পদযাত্রায় শামিল হতেই সবকাজ ফেলে ছুটে এসেছেন। অশেষ শ্রদ্ধায় বৃদ্ধা রাধিকা ভেমুলাকে জড়িয়ে ধরলেন রাহুল। রাধিকার চোখও তখন চিকচিক করছে। বোঝা গেল সন্তান হারানোর যন্ত্রণা এখন তাঁর মধ্যে কতটা তীব্র। এখনও কতটা মরিয়া ছেলের ন্যায় বিচারের জন্য। একইভাবে মরিয়া পদ্মের এই বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে। তাই ঝুঁকি সত্ত্বেও পা মেলালেন রাহুলের সঙ্গে। বুঝিয়ে দিলেনম বিজেপির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে তিনিও রাহুলের পাশে রয়েছেন। রাস্তায় নেমে ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চাওয়ার পাশাপাশি বিজেপি ও আরএসএসের হাত থেকে দেশের সংবিধানকে রক্ষার ডাক দিয়েছেন তিনি।
উচ্চবর্ণের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি-র ছাত্র রোহিত ভেমুলা। বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। দেশদ্রোহের অভিযোগ তুলে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রোহিত-সহ পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ৪ পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করে বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁদের হস্টেলে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪ মাস হস্টেলের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকার পর আত্মহত্যা করেন রোহিত। এই ঘটনায় আলোড়ন পড়ে যায়। প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে দলিতরা। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও দত্তাত্রেয়কে দায়ী করে তাঁদের ইস্তফার দাবি ওঠে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপির এক নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে পুলিশ। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কেউ শাস্তি পায়নি। সেই ঘটনাই আবার ফিরে এল মঙ্গলবার। ট্যুইটে রোহিত ভেমুলার মা লিখেছেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধির সঙ্গে পথ হাঁটলাম। বিজেপি-আরএসএসের হাত থেকে সংবিধান বাঁচাতে, রোহিত ভেমুলার জন্য ন্যায়বিচার, রোহিত আইন পাস, দলিতদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, সকলের জন্য শিক্ষার আহ্বান জানালাম।’ পরে রাহুলও ট্যুইটে লেখেন, ‘সামাজিক বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামের প্রতীক হলেন রোহিত ভেমুলা। তিনি ছিলেন এবং থাকবেন। রোহিতের মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর এই যাত্রার লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে নতুন করে সাহস, অনুপ্রেরণা পেলাম। মনকে নতুন শক্তি জুগিয়েছে।’