পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: রবিবার সন্ধ্যায় গুজরাটের মোরবীতে শতাধী প্রাচীন ব্রিজ ভেঙে পড়ায় এখনও পর্যন্ত ১৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ অনেকে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মত প্রশাসনের। ছট পুজো উপলক্ষে গোটা দেশে উৎসবের আমেজে একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু ভাবিয়েছে গোটা দেশকে। গুজরাটে ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতু ভেঙে পড়ার পর উঠছে হাজারো প্রশ্ন। দীর্ঘ ৭ মাস মেরামতির পর ২৬ অক্টোবর গুজরাটি নববর্ষ উপলক্ষে শতাধী প্রাচীন এই সেতু খোলা হয়েছিল জনসাধারণের জন্য। মোরবীর এই সেতু বিপর্যয়ের পিছনে উঠে আসছে দশটি বড় প্রশ্ন।
১) ওই সেতুতে ওঠার টিকিট ১৭ টাকা। তার বদলে ৫০ টাকায় ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করা হয়। তাহলে কি সেতু কর্তৃপক্ষ আগেও এমন কাজ করত, অথচ সেদিকে নজর ছিল না প্রশাসনের?
২) ওই সেতুটির ধারণ ক্ষমতা ছিল সীমিত। একসঙ্গে ১০০-১২০ জন উঠতে পারে, এটা জেনেও কিভাবে ৪০০ -র অধিক মানুষকে উঠতে দেওয়া হল? সেতুর রক্ষণাবেক্ষণকারীরা কি এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না?
৩) মোরবী-পুরসভার আধিকারিকদের মতে, ওই সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়নি এবং কোনো ধরণের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়নি সেতুর রক্ষণাবেক্ষণকারীরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই সবকিছুর তোয়াক্কা না করে যখন সেতু কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের জন্য সেটি খুলে দিচ্ছিল, তখন কোথায় ছিলেন পৌরসভার আধিকারিকরা? তাহলে কি তারা দেখেও না দেখার ভান করছিলেন?
৪) সেতুটি আপাতত পৌরসভার সম্পত্তি। সেখানকার টিকিট বিক্রি করা থেকে প্রাপ্ত লাভের অঙ্কের হিসেব রাখে পৌরসভা। তাহলে টিকিট ব্ল্যাক করার খবর কেন রাখেনি পুরসভা?
৫) ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি মানুষ যখন সেতুর উপর ভিঁড় করছিল, তখন তাদেরকে কেন আটকানো হয়নি? তাহলে কি প্রশাসনের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি সেখানে আদৌ উপস্থিত ছিলেন না?
৬) সেতুর রক্ষণাবেক্ষণকারীরা কি শুধু টিকিট ব্ল্যাক করা আর মুনাফা নিয়েই চিন্তিত ছিলেন? তারা কেন এতজন মানুষের সুরক্ষা নিয়ে ভাবলেন না?
৭) দূর্ঘটনার ৪ দিন আগে ওই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে এই ৪ দিনে পুরসভা, সেতু কর্তৃপক্ষকে কেন কোনো নোটিস পাঠায়নি?
৮) সারাবছর ওই সেতুতে একসঙ্গে ২০-২৫ জনকে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়। তাহলে প্রশাসনের চোখের সামনে কিভাবে তার থেকে প্রায় ১৬ গুন বেশি মানুষ উঠল?
৯) ১৫০ বছরের পুরোনো ওই সেতুর উপর অনেকে ছট পুজো করছিলেন। সেতুর উপর ছট পুজো করতে দিলে মানুষের ঢল নামবে সেটাই স্বাভাবিক। তাহলে অনুমতি দেওয়ার আগে এই বিষয়ে কেন চিন্তা ভাবনা করেনি পুরসভা ও সেতু কর্তৃপক্ষ?
১০) আসন্ন গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই কি ফিটনেস সার্টিফিকেট না দিয়ে তড়িঘড়ি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল মোরবীর শতাধী প্রাচীন ঝুলন্ত সেতু?