পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: তাঁর বয়স ৭২, কিন্তু উৎসাহ-উদ্যমে হার মানাতে পারেন ২৭ এর যুবককেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর পোশাক ও ফ্যাশন সেন্স নিয়ে বরাবরই সচেতন। সেই নিয়ে যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমনি সমালোচিতও হয়েছেন বারবার। তাঁর ১০ লক্ষ টাকার স্যুট ও বহুমূল্য সানগ্লাস দীর্ঘদিন শিরোনাম দখল করেছে। সময়, উপলক্ষ ও পরিবেশ মাথায় রেখে নরেন্দ্র মোদি তাঁর পোশাক নির্বাচন করেন। বিগত ৮ বছরে বিভিন্ন রাজ্য ও দেশ সফরে কয়েকশো বা তারও বেশি ধরণের পোশাক পরেছেন তিনি। তাঁর পোশাক যেমন অভিনব তেমনই বার্তাবহ।
নির্বাচনের আগে যে রাজ্যেই তিনি যান, সেখানকার ইতিহ্যবাহী পোশাক পরার চেষ্টা করেন। এই সপ্তাহের উত্তরাখণ্ড সফরও তার ব্যতিক্রম নয়। শুক্রবার চারধাম মন্দিরে প্রার্থনা থেকে শুরু করে একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়া পর্যন্ত ৮ ঘন্টার ব্যবধানে ৪ বার পোশাক পাল্টে রেকর্ড গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ ভারতের অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা হয়নি।
ভারতের অন্যান্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় নরেন্দ্র মোদি অনেক বেশি শৌখিন বলে মত রাজনৈতিক মহলের। ১২ নভেম্বর হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বচন। তাই এই সফরে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনি হিমাচল প্রদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে দিপাবলী উদযাপনের সময় তিনি সেনাবাহিনীর মত পোশাক পরেছেন। কুনো জাতীয় উদ্যানে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে চিতা বাঘ ছাড়ার সময়ও পরেছিলেন মানানসই পোশাক। তাঁর পোশাকের মাধ্যমে তিনি বারবার নিজের সমর্থক ও বিরোধীদের প্রতি গভীর বার্তা দিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হরিশ ঠাকুর বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রতিক সময়ের একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি রাজনীতিতে সময় পোশাক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন। তাঁর মতে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করতে, তাদের আবেগের উপর প্রভাব ফেলতে ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতে তিনি মানানসই পোশাক নির্বাচন করেন। অধ্যাপক হরিশের মতে এবছর প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি উত্তরাখণ্ডের টুপি পরেছিলেন উত্তরাখণ্ডের মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে। কারণ তার কয়েকমাস পরেই সেখানকার নির্বাচন ছিল। শুধু তাই নয়, উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনের সময় বিজেপির নেতারা ওই একই টুপি পরেছিলেন।
শুক্রবার সকালে দেরাদুনের বিমানবন্দরে তাঁকে সাদা কুর্তার সঙ্গে মাল্টিকালার প্রিন্টেড স্টোল পরতে দেখা গেছিল। এরপর কেদারনাথ মন্দিরে প্রার্থনা করার সময় তাঁর পরনে ছিল সেখানকার গাদ্দি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘চোলা ডোরা’। তারপর বদ্রিনাথের মন্দির দর্শনের সময় তিনি কালো রং এর পাফার জ্যাকেটের সঙ্গে হলুদ স্টোল পরেছিলেন। সবশেষে মানা গ্রামের একটি জনসভায় অংশগ্রহণ করার সময় তিনি ধূসর রং এর বাটন-ডাউন ওভারকোটের সঙ্গে ধূসর স্টোল ও গ্লাভস পরেছিলেন। সবমিলিয়ে হিমাচল সফরের আট ঘন্টার মধ্যে চারবার পোশাক পাল্টেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।